কম্পিউটার পেরিফেরাল বলতে ঐ সকল হার্ডওয়্যারকে বোঝায় যেগুলো কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থেকে কম্পিউটারের কার্যপরিধি ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
কম্পিউটার পেরিফেরালকে তিনভাগে ভাগ করা হয়-
১. কম্পিউটার স্টোরেজ
২. ইনপুট যন্ত্রপাতি
৩. আউটপুট যন্ত্রপাতি
কম্পিউটারে কাজ করার জন্য যে সকল তথ্য প্রদান করা হয় তাদের বলা হয় ইনপুট। কম্পিউটারে ইনপুট প্রদানের জন্য বিভিন্ন ধরণের যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এসকল যন্ত্রকে বলা হয় ইনপুট ডিভাইস। যেমনঃ কিবোর্ড, মাউস, স্ক্যানার, মাইক্রোফোন, জয়স্টিক, গ্রাফিক্স ট্যাবলেট, ওয়েবক্যাম, ডিজিটাল ক্যামেরা, MICR-রিডার, ওএমআর, ওসিআর, বারকোড রিডার ইত্যাদি।
কিবোর্ড ইংরেজি শব্দ key board থেকে এসেছে, যা এখন প্রায় বাংলা একটি শব্দ। বাংলা করলে দাঁড়াবে চাবির পাটাতন। কতগুলো কি একত্রে একটি ধারকের মধ্যে থাকায় এইরূপ নামকরণ। কম্পিউটারের কিবোর্ড হল একটি টাইপরাইটার যন্ত্র বিশেষ যার মধ্যে কতগুলো বাটন বা চাবির সন্নিবেশ থাকে এবং এগুলো ইলেক্ট্রনিক সুইচ এর কাজ করে। বর্তমানে প্রচলিত কিবোর্ডগুলোতে সর্বোচ্চ ১০৫ টি কি থাকে। কিবোর্ডে বিভিন্ন ধরণের কি থাকে-
ফাংশন কিঃ তথ্য সংযোজন, বিয়োজন বা নির্দেশ প্রদানের জন্য ফাংশন কি ব্যবহার করা হয়। F1-F12 পর্যন্ত মোট ১২ টি ফাংশন কি রয়েছে।
আলফানিউমেরিক কিঃ কিবোর্ডে অ্যালফাবেট (a-z) এবং নম্বর (0-9) দিয়ে সাজানো কি গুলোকে বলা হয় আলফানিউমেরিক কি।
নিউমেরিক কি-প্যাডঃ কিবোর্ডের ডান অংশে ক্যালকুলেটরের মতো অর্থাৎ 0-9 এবং যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ ইত্যাদি চিহ্নিত কিগুলোকে নিউমেরিক কি-প্যাড বলা হয়। ১৭ টি নিউমেরিক কি রয়েছে।
মডিফাইয়ার কিঃ কিবোর্ডের যে সকল বোতামে কোন অক্ষর বা বর্ণ টাইপ করা থাকেনা কিন্তু অক্ষর বা বর্ণ বিন্যাসের কাজ এবং অন্যান্য ধরণের কাজ করা হয় সেগুলোকে বলা হয় মডিফাইয়ার কি। যেমনঃ Shift, Option, Command, Ctrl, Alt ইত্যাদি।
কার্সর মুভমেন্ট কিঃ কিবোর্ডের ডান দিকে চারটি Arrow Key আছে। এগুলোকে কার্সর মুভমেন্ট কি বলা হয়।
কিবোর্ড বিন্যাসঃ বিভিন্ন ধরণের কিবোর্ড লে-আউট আছে। কিবোর্ডের বাম প্রান্তের উপরের ছয়টি বর্ণের ক্রম দিয়ে এই লে-আউটের নামকরণ করা হয়। যেমনঃ QWERTY layout, QWERTZ layout, AZERTY layout.
অভ্র কিবোর্ডঃ অভ্র কিবোর্ড হল বাংলা লেখার একটি মুক্ত সফটওয়্যার। এতে ফোনেটিক পদ্ধতিতে বাংলা লেখা যায়। মেহেদি হাসান অভ্র কিবোর্ড উদ্ভাবন করেন।
মাউস কম্পিউটার পরিচালনায় ব্যবহৃত একটি হার্ডওয়্যার। ১৯৬০ এর দশকের শেষ ভাগে স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের ডুগ এঙ্গেলবার্ট সর্বপ্রথম মাউস আবিষ্কার করেন। কিন্তু সত্তরের দশকে এটি কেবল জেরক্সের কম্পিউটার ছাড়া অন্যত্র জনপ্রিয়তা পায় নাই। ১৯৮০ এর দশকে আ্যাপল কম্পিউটার তাদের ম্যাকিন্টশ সিরিজে প্রথম এটি উপস্থাপন করে, এর আকৃতি ইঁদুরের মত তাই এর নাম mouse দেয়া হয়েছিল। এটি একটি ইনপুট ডিভাইস, এর মাধ্যমে মনিটরের বা প্রোগ্রামের যে কোন স্থানে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা সম্ভব। এর কল্যাণে গ্রাফিক্স ইউজার ইন্টারফেস বা GUI সম্বলিত আপারেটিং সিসটেম এত দ্রুত প্রসার পায়। এর সাহায্যে যে কাজগুলো করা যায়-
পয়েন্টিং: মাউস পয়েন্টকে মনিটর স্ক্রিনের যে কোন জায়গায় Move করানোকে পয়েন্টিং বলা হয়।
ক্লিকঃ মাউসের বাটনকে একবার ক্লিক করে ছেড়ে দেওয়াকে সিঙ্গেল ক্লিক বা শুধু ক্লিক বলা হয়।
ডাবল ক্লিকঃ মাউসের বাটন পরপর দুইবার চাপ দেওয়াকে ডাবল ক্লিক বলা হয়।
ড্র্যাগ এন্ড ড্রপঃ কোন ছবি, আইকন বা উইন্ডোকে সিলেক্ট করে মাউসের বাম বাটন চেপে ধরে টেনে আনাকে ড্র্যাগ বা ড্র্যাগিং বলে। এভাবে ড্র্যাগ করে ছেড়ে দেওয়াকে ড্রপিং বা ড্রপ বলা হয়।
সিলেক্টঃ কোন অবজেক্ট সিলেক্ট করতে হলে অবজেক্টের ডান বা বাম দিকে আই-বিম ক্লিক করে মাউসে চেপে রেখে অবজেক্টের উপর দিয়ে বাম বা ডানদিকে টেনে নিয়ে যেতে হবে। এতে টেনে নিয়ে যাওয়া অংশটুকুর উপর অন্য রঙের আচ্ছন পড়ে যাবে। একেই সিলেক্ট বলা হয়।
মাইক্রোফোন
মাইক্রোফোন একটি ইনপুট ডিভাইস যা শব্দ রেকর্ডিং এর জন্য ব্যবহার করা হয়। মাইক্রোফোনের মাধ্যমে শব্দ রেকর্ড হয় এবং ডিজিটাল ফরমেটে রুপান্তরের পর সাউন্ড ফাইল হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়।
জয়স্টিক
জয়স্টিক হল একটি ইনপুট ডিভাইস যতে আয়তাকার বেসের উপর একটি দন্ড বসানো থাকে। বেসের সাথে কম্পিউটারের সংযোগ থাকে। সাধারণত কম্পিউটারে গেম খেলতে জয়স্টিক ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ও বিভিন্ন ধরণের সিমুলেশনের কাজেও জয়স্টিক ব্যবহৃত হয়।
গ্রাফিক্স ট্যাবলেট
গ্রাফিক্স ট্যাবলেট কার্যত মাউসের বিকল্প যন্ত্র। গ্রাফিক্স ট্যাবলেট দেখতে অনেকটা পেন্সিলের স্লেটের মতো। বিশেষ কলম দিয়ে স্লেট বা প্যাডের উপরে ছবি বা কোন অলঙ্করণের কাজ করা যায়।
ওয়েবক্যাম
ওয়েবক্যাম হল একটি ভিডিও ক্যামেরা যা কম্পিউটার থেকে কম্পিউটারে রিয়েল টাইম ইমেজ বা ভিডিও আদানপ্রদান করে। এর মাধ্যমে ইন্টারনেটে ভিডিও চ্যাটিং করা যায়, কম্পিউটার থেকে ভিডিও দেখে নিরাপত্তার কাজ করা যায় এবং ভিডিও রেকর্ডিং করা যায়।
ডিজিটাল ক্যামেরা
চলন্ত এবং স্থির ছবি তুলে তা কম্পিউটারে দেওয়ার জন্য ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহৃত হয়। ডিজিটাল ক্যামেরাতে ফিল্ম থাকেনা। এতে CCD(Charge Coupled Device) নামক একটি চিপ থাকে।
MICR-রিডার
MICR এর পূর্ণরূপ হল Magnetic Ink Character Recognition. যে মেশিন MICR লেখা পড়তে পারে তাকে MICR-রিডার বলে। চৌম্বক কালির সাহায্যে MICR লেখা হয়। এই পদ্ধতিতে ব্যাংকের চেক নাম্বার লেখা ও পড়া হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সকল ব্যাংকে MICR যুক্ত চেক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ওএমআর
OMR বা Optical Mark Reader এমন এক যন্ত্র যা পেন্সিল বা কালির দাগ বুঝতে পারে। পেন্সিলের দাগ বোঝা যায় পেন্সিলের সীসার উপাদান গ্রাফাইটের বিদ্যুৎ পরিবাহিতা যাচাই করে। কালির দাগ বোঝা যায় কালির দাগের আলোর প্রতিফলন বিচার করে। অবজেকটিভ প্রশ্নের উত্তরপত্র পরীক্ষা, বাজার সমীক্ষা, জনগণনা ইত্যাদি কাজে OMR ব্যবহৃত হয়।
ওসিআর
OCR বা Optical Character Reader শুধু দাগই বোঝেনা, বিভিন্ন বর্ণের পার্থক্যও বুঝতে পারে। চিঠির পিন কোড, ইলেকট্রিক বিল, ইনস্যুরেন্স প্রিমিয়াম, নোটিস ইত্যাদি পড়ার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
বারকোড রিডার
বারকোড রিডার একটি অপটিক্যাল ইনপুট ডিভাইস। বারকোড বলতে কমবেশি চওড়াবিশিষ্ট পর্যায়ক্রমে কতগুলো বার বা রেখার সমাহারকে বোঝায়। একে ইউনিভার্সাল প্রোডাক্ট কোডও বলা হয়। দোকান থেকে বিক্রিত জিনিসের প্যাকেটের উপর বারকোডের সাহায্যে জিনিসের নাম, মূল্য ইত্যাদি লেখা থাকে। অতঃপর একটি কম্পিউটার বারকোড রিডারের সাহায্যে কোডটি পড়ে তা কোন সংখ্যা বোঝায়, তা জেনে নিতে পারে। কম্পিউটারের স্মৃতিতে প্রতিটি জিনিসের বারকোড নাম্বার ও দাম রক্ষিত থাকে। এ থেকে কম্পিউটার বিক্রিত জিনিসের নাম ও দাম রক্ষিত থাকে। এ থেকে কম্পিউটার বিক্রিত জিনিসের নাম ও দাম লিখে বিল তৈরি করে এবং সাথে সাথে বিক্রিত জিনিসের স্টক আপডেট করে।
কম্পিউটারের কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট প্রাপ্ত ইনপুটকে ব্যবহারকারীর দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী প্রক্রিয়াকরণের কাজ সম্পন্ন করে। প্রক্রিয়াকরণের কাজ সম্পন্ন হলে তার ফল পাওয়া যায়। একে বলে আউটপুট। প্রক্রিয়াকরণের পর যে সকল যন্ত্রের সাহায্যে ফল পাওয়া যায় তাদেরকে বলা হয় আউটপুট ডিভাইস। যেমনঃ মনিটর, প্রিন্টার, স্পিকার, প্রোজেক্টর, প্লটার হেডফোন ইত্যাদি।
মনিটর এক ধরণের আউটপুট ডিভাইস যার মাধ্যমে টেলিভিশনের মতো লেখা বা ছবি দেখা যায়। মনিটর সাধারণত তিন ধরণের হয়ে থাকে-
১. সিআরটি মনিটর
২. এলসিডি মনিটর
৩. এলইডি মনিটর
সিআরটি মনিটরঃ CRT এর পূর্ণরূপ হলো Cathode Ray Tube. ক্যাথোড রে টিউবযুক্ত মনিটরকে সিআরটি মনিটর বলা হয়। টিউবের ভেতর দিকে ফসফর নামক এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থের প্রলেপ থাকে। সাদাকালো সিআরটি মনিটরে একটি ইলেকট্রন গান থাকে এবং রঙিন মনিটরে তিনটি মৌলিক রঙ (লাল, সবুজ, আসমানি) প্রদর্শনের জন্য তিন ধরণের ইলেকট্রন গান থাকে। আকারে অপেক্ষকৃত বড় এবং বিদ্যুৎ খরচ বেশী হওয়ায় মনিটরগুলোর ব্যবহার দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে।
এলসিডি মনিটরঃ LCD এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Liquid Crystal Display. কম্পিউটারে ব্যবহৃত এক ধরণের ডিসপ্লে ইউনিট। একে ফ্ল্যাট প্যানেল মনিটরও বলা হয়। ক্যালকুলেটর, ডিজিটাল ঘড়ি, ল্যাপটপ কিংবা নোটবুকে এ ধরণের মনিটর ব্যবহৃত হয়।
এলইডি মনিটরঃ LED এর পূর্ণ রূপ হলো Light Emitting Diode. এটি LCD মনিটরের মতোই কাজ করে কিন্তু এর ব্যাকলাইট ভিন্ন ধরণের। LCD মনিটর অপেক্ষা ডিসপ্লে কোয়ালিটি ভালো মানের এবং বিদ্যুৎ খরচ ৪০% কম। তৈরি করার সময় LCD মনিটরের মতো মারকারি ব্যবহার করা হয় না বলে এটি বেশী পরিবেশবান্ধব।
ভিডিও কন্ট্রোলারঃ মনিটরের পর্দায় কোন ছবি, লেখা বা টেক্সট প্রদর্শনের জন্য কম্পিউটার একটি ইন্টারফেস ব্যবহার করে, যাকে ভিডিও কন্ট্রোলার বলা হয়। এটি প্রসেসর থেকে প্রাপ্ত সিগন্যাল যথাযথভাবে রুপান্তর করে প্রদর্শনের জন্য মনিটরে পাঠায়। নিচে কিছু জনপ্রিয় ভিডিও কন্ট্রোলারের নাম- VGA (Video Graphics Array), SVGA (Super Video Graphics Array), XGA (Extended Graphics Array) ইত্যাদি।
পিক্সেলঃ কম্পিউটারে তথ্য প্রদর্শনের ক্ষুদ্রতম একক হচ্ছে পিক্সেল। এই শব্দটি ইংরেজি Picture Element এর সংক্ষিপ্ত রূপ। পিক্সেল হচ্ছে ডেটা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত মাধ্যমের ক্ষুদ্রতম এলাকা যার বর্ণ এবং উজ্জ্বলতা স্বতন্ত্রভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
রেজুলেশনঃ ডিসপ্লে পর্দা বা স্ক্রিনে প্রদর্শিত ছবির সূক্ষ্মতাকে রেজুলেশন বলে। স্ক্রিনের প্রতি ইঞ্চিতে যত বেশী পিক্সেল থাকবে তত বেশী সূক্ষ্ম হবে।
রিফ্রেস রেটঃ রিফ্রেস রেট হল পিক্সেলের উজ্জ্বলতা ঠিক রাখার জন্য প্রতি সেকেন্ডে পিক্সেলগুলো কতবার রিচার্জ হয় তার সংখ্যা। Refresh Rate যত বেশী হবে ইমেজ স্ক্রিনে তত বেশী দৃঢ় দেখাবে। Refresh Rate কে হার্টজ এককে প্রকাশ করা হয়।
যে যন্ত্রের সাহায্যে কম্পিউটারে প্রাপ্ত ফলাফল কাগজে ছাপানো যায়, তাকে প্রিন্টার বলা হয়। প্রিন্টারের মান কি রকম হবে তা নির্ভর করে প্রিন্টারের রেজুলেশনের উপর। প্রিন্টারের রেজুলেশন পরিমাপের একক DPI. DPI এর পূর্ণরূপ হল Dots Per Inch. কার্যপ্রণালী অনুসারে প্রিন্টারকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়-
১. ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার
২. নন-ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার
১. ইমপ্যাক্ট প্রিন্টারঃ যে প্রিন্টারে প্রিন্টহেড যে কাগজে ছাপা হয় তাকে স্পর্শ করে, তাকে ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার বলা হয়। ধীরগতি সম্পন্ন এ সকল প্রিন্টারের ছাপা সাধারণ মানের এবং প্রিন্ট এর সময় বিরক্তিকর শব্দ হয়। একে দু’ভাগে ভাগ করা হয়-
ক) লাইন প্রিন্টারঃ লাইন প্রিন্টারে প্রতিবারে একটি সম্পূর্ণ লাইন ছাপা হয়। এগুলো ইমপ্যাক্ট প্রিন্টারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতির। লাইন প্রিন্টার প্রতি মিনিটে ২০০ থেকে ৩০০০ লাইন ছাপাতে পারে। লাইন প্রিন্টারকে আবার দুইভাগে ভাগ করা হয়- চেইন প্রিন্টার ও ড্রাম প্রিন্টার।
খ) সিরিয়াল প্রিন্টারঃ সিরিয়াল প্রিন্টার টাইপ রাইটারের মতো একবারে মাত্র একটি বর্ণ ছাপা হয়। এগুলো ধীরগতি সম্পন্ন। সিরিয়াল প্রিন্টারকে দুইভাগে ভাগ করা হয়-
i) ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টারঃ আয়তাকারে সাজানো কতকগুলো বিন্দুকে ডট ম্যাট্রিক্স বলে। যেমনঃ বিন্দুগুলো ৮টি সারি ও এবং ১২টি স্তম্ভে সাজানো থাকলে তাকে বলে ৮X১২ ডট ম্যাট্রিক্স। এই বিন্দুগুলোর মধ্যে কিছু বিন্দু নির্বাচন করে যে কোন বর্ণ ফুটিয়ে তোলা যায়। ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টারে লেখার জন্য ছোট পিনে গ্রিড ব্যবহার করা হয়। অনেকগুলো পিনের মাথা রিবনের উপর আঘাত করে কাগজের উপর বিন্দু বসিয়ে অক্ষর তৈরি করা হয়। সাধারণত এই প্রিন্টারে ৭, ৯অথবা ২৪ পিন থাকে, যেগুলো লাইন বরাবর চলাচল করে বিন্দুর মাধ্যমে অক্ষর তৈরি করে। এ প্রিন্টারে ছাপা অক্ষর বা প্রতীক সূক্ষ্ম হয় না। এর গতি পরিমাপ একক cps (characters per second).
ii) ডেইজি হুইল প্রিন্টারঃ ডেইজি হুইল প্রিন্টারে একটি চ্যাপ্টা চাকার সঙ্গে সাইকেলের স্পোকের মতো অনেকগুলো স্পোক লাগানো থাকে। প্রতিটি স্পোকের মাথায় একটি বর্ণ এমবস করা থাকে। স্পোকগুলোসহ চাকাকে একটি ডেইজি ফুলের মতো দেখতে বলে এর এই নাম।
২. নন-ইমপ্যাক্ট প্রিন্টারঃ যে প্রিন্টারে প্রিন্টহেড যে কাগজে ছাপা হয় তাকে স্পর্শ করেনা তাকে নন-ইমপ্যাক্ট প্রিন্তার বলা হয়। উচ্চগতিসম্পন্ন এ সকল প্রিন্টারের ছাপা উচ্চমানের এবং প্রিন্ট এর সময় কোন বিরক্তিকর শব্দ হয় না। যেমনঃ ইংকজেট প্রিন্টার, লেজার প্রিন্টার ইত্যাদি
ইঙ্কজেট প্রিন্টারঃ ইঙ্কজেট প্রিন্টারে কতগুলো নোজল দিয়ে বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত তরল কালি কাগজের দিকে স্প্রে করা হয়। একটি তড়িৎক্ষেত্র এ চার্জযুক্ত কালির সূক্ষ্মকণাগুলোকে ঠিকমতো সাজিয়ে দিয়ে কাগজের উপর কোন বর্ণ ফুটিয়ে তোলে। যেমনঃ Cannon Bubble jet, HP Deskjet, Epson Stylus ইত্যাদি।
লেজার প্রিন্টারঃ লেজার প্রিন্টারে লেজার রশ্মির সাহায্যে কাগজে লেখা ফুটিয়ে তোলা হয়। লেজার প্রিন্টার মুদ্রণের জন্য লেজার রশ্মি একটি আলোক সংবেদনশীল ড্রামের উপর মুদ্রণযোগ্য বিষয়ের ছাপা তৈরি করে। তখন লেজার রশ্মির প্রক্ষেপিত অংশ টোনার আকর্ষণ করে। কাগজের উপর পতিত টোনার উচ্চতাপে গলে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসে যায়।এভাবে লেজার প্রিন্টারে মুদ্রণের কাজ সম্পন্ন হয়। একে পেজ প্রিন্টারও বলা হয়। যেমনঃ HP Laserjet, Samsung ML-2010, Canon LBP 3500 ইত্যাদি।
বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি বা দ্বিমিক সংখ্যা পদ্ধতি (ইংরেজি: Binary number system) একটি সংখ্যা পদ্ধতি যাতে সকল সংখ্যাকে কেবলমাত্র ০ এবং ১ দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এই সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি দুই। ডিজিটাল ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির লজিক গেটে এই সংখ্যাপদ্ধতির ব্যাপক প্রয়োগ রয়েছে। সকল আধুনিক কম্পিউটারে বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। কম্পিউটার সমস্ত হিসাব নিকাশ ০ ও ১ এর মাধ্যমে সম্পন্ন করে। তাই কম্পিউটারে প্রদত্ত সমস্ত নির্দেশ টেলেক্স কোডকে প্রথমে বাইনারি অঙ্কে রূপান্তর করে তার পর হিসাব নিকাশ সম্পন্ন করে ।
বিটঃ বাইনারি নাম্বার পদ্ধতিতে ব্যবহৃত ০ এবং ১ এর অংক দুটটির প্রত্যেকটিকে একটি বিট বলা হয়। ইংরেজি binary শব্দের Bi এবং Digit শব্দের t নিয়ে বিট Bit শব্দটি গঠিত। যেমনঃ ১০১০১ সংখ্যাটিতে পাঁচটি বিট আছে। কম্পিউটারের স্মৃতিতে ০ এবং ১ এর কোড দিয়ে বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষিত থাকে। এজন্য কম্পিউটারের স্মৃতির ধারণক্ষমতা পরিমাপের ক্ষুদ্রতম একক হিসেবে বিট শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
বাইটঃ ৮ বিটের কোড দিয়ে যে কোন বর্ণ, অংক বা বিশেষ চিহ্নকে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। ৮টি বিট দিয়ে গঠিত শব্দকে Byte বলা হয়। যেমনঃ ১০০০১০১০ হল ১টি বাইট। বাইট হলো বাইনারি পদ্ধতিতে তথ্য প্রকাশের মৌলিক একক। কম্পিউটারে স্মৃতি ধারণক্ষমতা বাইটে প্রকাশ করা হয়।
শব্দ দৈর্ঘ্যঃ কম্পিউটারে সকল শব্দই থাকে ০ বা ১ বিট হিসেবে। ৮ বিট বিশিষ্ট শব্দকে বাইট বলা হয়। কোন শব্দে যতগুলো বিট থাকে সেই সংখ্যাকে বলে শব্দ দৈর্ঘ্য। সাধারণত শব্দ দৈর্ঘ্য ৮ গুনিতকে ৮ থেকে ৬৪ বিটে হয়।
মেমোরির ধারণক্ষমতাঃ কম্পিউটার মেমোরিতে ডেটা সংরক্ষণের পরিমাণকে মেমোরির ধারণক্ষমতা বলে। একে প্রকাশ করা হয় বাইট, কিলোবাইট, মেগাবাইট, গিগাবাইট ইত্যাদি দ্বারা।
১ বাইট = ৮ বিট
১ কিলোবাইট = ২১০ বাইট বা ১০২৪ বাইট
১ মেগাবাইট = ২২০ বাইট বা ১০২৪ কিলোবাইট
১ গিগাবাইট = ২৩০ বাইট বা ১০২৪ মেগাবাইট
১ টেরাবাইট = ২৪০ বাইট বা ১০২৪ গিগাবাইট
১ পিটাবাইট = ২৫০ বাইট বা ১০২৪ টেরাবাইট
প্রধান মেমোরি এবং তার প্রকারভেদঃ যে মেমোরি সিপিইউ এর গাণিতিক ও যুক্তি অংশের সাথে সংযুক্ত তাকে প্রধান মেমোরি (Main Memory) বলা হয়। প্রধান মেমোরিকে প্রাথমিক মেমোরি (Primary Memory হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। মাইক্রোকম্পিউটার বা পার্সোনাল কম্পিউটারে অর্ধপরিবাহী মেমোরি (Semiconductor Memory) ব্যবহার করা হয়। অর্ধপরিবাহী পদার্থ দিয়ে তৈরি বলেই একে অর্ধপরিবাহী মেমোরি বলা হয়। বহুল ব্যবহৃত এ অর্ধপরিবাহী মেমোরি দুইপ্রকার- র্যাম (Random Access Memory) এবং রম (Read Only Memory).
মাদারবোর্ডের সাথে সরাসরি সংযুক্ত যে মেমরিতে Read এবং Write দুটি কাজই সম্পন্ন করা যায়, সে মেমোরিকে RAM (Random Access Memory) বলা হয়। এটি একটি অস্থায়ী মেমোরি। কম্পিউটারে যতক্ষণ বিদ্যুৎ প্রবাহ চালু থাকে , ততক্ষণ র্যামে তথ্যসমূহ সংরক্ষিত থাকে। বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে র্যাম তার সমস্ত তথ্য মুছে ফেলে। এজন্য র্যামকে কম্পিউটারের অস্থায়ী (Volatile) মেমোরিও বলা হয়। এছাড়া র্যামকে মেইন স্টোরেজ (Main Sotrage) এবং কোর স্টোরেজ (Core Storage) হিসেবেও অভিহিত করা হয়। র্যাম হচ্ছে কম্পিউটারের কর্ম এলাকা। মাইক্রোপ্রসেসর প্রাথমিকভাবে র্যাম এলাকায় প্রয়োজনীয় তথ্য জমা করে। মাইক্রোপ্রসেসর সরাসরি র্যামের জন্য জানা অবস্থান বা ঠিকানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বা তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে। এখানে সরাসরি তথ্য সংগ্রহের জন্য যাওয়া যায় বলে একে Random Access Memory বলা হয়।
ROM (Read Only Memory) স্থায়ী প্রকৃতির প্রধান মেমোরি। রমের স্মৃতিতে রক্ষিত তথ্যসমূহ কেবল ব্যবহার করা যায় কিন্তু সংযোজন, সংশোধন বা পরিবর্তন করা যায় না। তাই একে Read Only Memory বলা হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হলে রমে রক্ষিত তথ্য মুছে যায় না।
রমের প্রকারভেদঃ
ক) এমরম (MROM= Mask Read Only Memory)
খ) পিরম বা প্রম (PROM= Progammable Read Only Memory)
গ) ইপ্রম (EPROM= Eraseable Programmable Read Only Memory)
ঘ) ইইপ্রম (EEPROM= Electrically Eraseable PROM)
ঙ) ইএপ্রম (EAPROM= Electrically Alterable PROM)
১৭৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর লন্ডনে জন্ম গ্রহন করেন ' কম্পিউটার জনক ' বলে খ্যাত আবিষ্কারক গণিতবিদ চার্লস ব্যাবেজ। চার্লস ব্যাবেজ একাধারে একজন গণিতবিদ, দার্শনিক, আবিষ্কারক এবং যন্ত্রপ্রকৌশলী। তিনি ছিলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক। তিনিই সর্বপ্রথম প্রোগ্রামযোগ্য কম্পিউটারের ধারণার সূচনা করেন। তিনি প্রথম ১৮২২ সালে ডিফারেন্স মেশিন নামে তৈরি করেন বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার। ১৮৩৩ সালে এনালাইটিক্যাল ইঞ্জিন নামক একটি গণনা যন্ত্র তৈরির পরিকল্পনা করেন এবং নকশা করেন ।তাই তাকে কম্পিউটারের জনক বলে অ্যাখায়িত করা হয় ।
বিখ্যাত কবি লর্ড বায়রনের কন্যা অগাস্টা আডা বায়রন, যার ডাক নাম ছিল ' কাউন্টেস অফ লাভলেস ' বা ' অ্যাডা লাভলেস ' চার্লস ব্যাবেজ আবিস্কৃত কম্পিউটারের বা ডিফারেন্স মেশিনের জন্য প্রথম প্রোগ্রাম লেখেন। চার্লস ব্যাবেজের আবিষ্কার কে আরো গতিময় করে ছিলেন অগাস্টা বায়রন। বর্তমানে প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে অগাস্টা আডা বায়রনের নাম স্মরণীয় হয়ে আছে।ADA হচ্ছে কম্পিউটার এর প্রথম প্রোগ্রামিং ভাষা যা লেডি অ্যাডা আগাস্টার নাম অণুসারে নামকরণ করা হয় ।
প্রানিদেহের সাথে কম্পিউটারের তুলনা করলে বলা যায় , কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার হচ্ছে দেহ আর সফটওয়্যার হচ্ছে প্রাণশক্তি।
কম্পিউটার সফটওয়্যার বলতে একগুচ্ছ কম্পিউটার প্রোগ্রাম, কর্মপদ্ধতি ও ব্যবহারবিধিকে বোঝায়, যার সাহায্যে কম্পিউটারে কোনো নির্দিষ্ট প্রকারের কাজ সম্পাদন করা যায়।
বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যারের মধ্যে রয়েছে ব্যবহারিক সফটওয়্যার, যেমন- অফিস স্যুট অ্যাপলিকেশন, যার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকারের চিঠিপত্র, বিল, হিসাবপত্র, তথ্য ভান্ডার তৈরি করা যায়।
আবার কম্পিউটারের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকারের সফটওয়্যার চালানো ও সার্বিকভাবে কম্পিউটার পরিচালনার জন্য এক প্রকারের সফটওয়্যার রয়েছে যেগুলিকে বলা হয় অপারেটিং সিস্টেম, যেমন লিনাক্স, ম্যাক ওএস, মাইক্রোসফট উইন্ডোজ, ইত্যাদি। এ ধরনের সফটওয়্যারগুলি কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও অন্যান্য সফটওয়্যারের মাঝে সমন্বয় সাধন করে এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে সকল প্রকারের কাজ সম্পাদনে সাহায্য করে।
এছাড়া প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকারের সফটওয়্যার তৈরি করা হয় যা অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার নামে পরিচিত।
সফটওয়্যার প্রধানতঃ ৩ প্রকারঃ-
১. সিস্টেম সফটওয়্যার
সিস্টেম সফটওয়্যার একটি কম্পিউটার সফটওয়্যার যেটার নকশা করা হয়েছে, কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার কে পরিচালনা করার জন্য এবং এপ্লিকেশন সফটওয়্যারগুলোকে কাজ করার উপযোগী পরিবেশ প্রদানের জন্য।
২. প্রোগ্রামিং সফটওয়্যার
প্রোগ্রামিং সফটওয়্যার হল একধরণের কম্পিউটার প্রোগ্রাম অথবা এ্যাপ্লিকেশন যা সফটওয়্যার উন্নয়নকারীগণ ব্যবহার করে থাকেন কোনো সফটওয়্যার তৈরি, ডিবাগ, নিয়ন্ত্রণ, রক্ষণাবেক্ষণ অথবা অন্য প্রোগ্রাম বা এপ্লিকেশনগুলোকে সহযোগিতা করতে।
৩. এপ্লিকেশন সফটওয়্যার
এপ্লিকেশন সফটওয়্যার তৈরী করা হয় ব্যবহারকরীর চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কাজ করার জন্য। এপ্লিকেশন সফটওয়্যার অপারেটিং সিস্টেম, ইউটিলিটি সফটওয়্যার, এবং একটি প্রোগ্রামিং ভাষা সফটওয়্যার থেকে ভিন্ন। এটি যে কাজের জন্য তৈরী করা হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে এটা লেখা, সংখ্যা, ছবি অথবা এই সবগুলোর সমন্বয়ে হতে পারে। কিছু কিছু এপ্লিকেশন প্যাকেজ কম্পিউটারের একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য হতে পারে যা সবাই ব্যবহার করে একই উদ্দেশ্য এবং এটি শুধু একটি সুবিধা বা উদ্দেশ্যের উপর জোর দেয় যেমন ওয়ার্ড প্রসেসিং |
ডাটাবেস
ডাটাবেস হল কোন কম্পিউটার সিস্টেমে সঞ্চিত উপাত্ত বা রেকর্ডসমূহের একটি কাঠামোবদ্ধ সংগ্রহ। উপাত্তকে একটি উপাত্ত মডেল অনুসারে সাজিয়ে এই কাঠামোটি অর্জন করা হয়। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত উপাত্ত মডেল হল সাম্পর্কিক বা রিলেশনাল মডেল। অন্যান্য মডেল, যেমন স্তরক্রমিক বা হায়ারার্কিকাল মডেল এবং নেটওয়ার্ক মডেল, উপাত্তসমূহের মধ্যকার সম্পর্ক অপেক্ষাকৃত স্পষ্টভাবে উপস্থাপন (Explicit Representation) করে। ডাটাবেসকে (Database) অনেক সময় সংক্ষেপে DB বা db আকারে লেখা হয় ।
ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম
ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম হল সফটওয়্যার নিয়ন্ত্রিত একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে ডাটাবেস পরিচালনা, তথ্যের স্থান সংকুলান, নিরাপত্তা, ব্যাকআপ, তথ্য সংগ্রহের অনুমতি ইত্যাদি নির্ধারণ করা হয়। কিছু জনপ্রিয় ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম হল ওরাকল(Oracle), এসকিউএল(SQL), এসকিউলাইট(SQLite), মাইএসকিউএল(MySQL), পোস্টজিআরই-এসকিউএল(PostgreSQL),মাইক্রোসফট এসকিউএল সার্ভার(Microsoft SQL Server ), আইবিএম ডিবি২(IBM DB2 ), মাইক্রোসফট এক্সেস(Microsoft Access),ফাইল মেকার প্রো(File Maker Pro)।সাধারণত একটি ডাটাবেস বিভিন্ন রকমের ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে ব্যবহার করা যায়না তবে এসকিউএল সহ কিছু স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করে একই অ্যাপ্লিকেশনে বিভিন্ন সিস্টেম একসাথে ব্যবহার করা যায়।
ব্যবহার
ডাটাবেজ ব্যবহৃত হয় আভ্যন্তরীন কার্যক্রম পরিচালনা সমর্থনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এবং অনলাইনে ক্রেতা এবং সরবরাহকারীদের সাথে সম্পর্ক তৈরীর উদ্দেশ্যে।
ডাটাবেজে প্রসাশনিক তথ্য এবং বিশেষায়িত ডাটা থাকে যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং ডাটা অথবা অর্থনৈতিক মডেলসমূহ। ডাটাবেজের ব্যবহারের উদাহরণ হল কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত লাইব্রেরি ব্যবস্থা, ফ্লাইট সংরক্ষণ ব্যবস্থা এবং পার্টস ইনভেন্টরি সিস্টেম।ব্যাংকিং-এ ক্রেতা, একাউন্ট, ঋণ ,ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ক্রয়, লেনদেন ও মাসিক বিবরণী প্রস্তুুত এবং লেনদেনের বিপুল তথ্যের প্রক্রিয়াকরণের জন্য ডাটাবেজ ব্যবহৃত হয়।
ওয়ার্ড প্রসেসর একটি কম্পিউটার আপ্লিকেশন যেটা ব্যবহৃত হয় সম্পাদনা (ডকুমেন্ট প্রস্তুত, সম্পদনা, ডকুমেন্টের গঠন নির্ধারণ, ডকুমেন্ট সংরক্ষণ, মুদ্রণ) করার কাজে।
বহুল ব্যবহৃত একটি ওয়ার্ড প্রসেসর সফটওয়্যার হল মাইক্রোসফট ওয়ার্ড।
বৈশিষ্ট্য
লেখার মাঝখানে নতুন কোনো লেখা সনি্নবেশিত করা যায় এবং অপ্রয়োজনীয় কোনো লেখা মুছে দেওয়া যায়।কোনো শব্দ বদলিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্য কোনো শব্দ বসানো যায়।বানান ভুল ও ব্যাপকরণগত ভুল নির্ণয় ও সংশোধন করা যায়।লেখার যেকোনো অংশ অন্য যেকোনো অংশে কপি বা স্থানান্তর করা যায়।এক ফাইলের লেখা অন্য ফাইলে সংযোজন করা যায়।একই ধরনের কাজ বার বার করার প্রয়োজন হলে কাজকে একটিমাত্র কমান্ড হিসেবে সংরক্ষণ করা যায় এবং ব্যবহার করা যায়।প্রস্তুতকৃত লিপিকে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য কোনো নামে সংরক্ষণ করা যায়।একই ফাইলের মূল লেখার সাথে অন্য ফাইলে সংরক্ষিত ঠিকানা এবং অন্যান্য তথ্য সংযুক্ত করে ফর্মলেটার তৈরি করা যায়।বিভিন্নভাবে সজ্জিত করে কাগজে স্থায়িভাবে মুদ্রণ করা যায়।
কম্পিউটার ভাইরাস হল এক ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা ব্যবহারকারীর অনুমতি বা ধারণা ছাড়াই নিজে নিজেই কপি হতে পারে। মেটামর্ফিক ভাইরাসের মত তারা প্রকৃত ভাইরাসটি কপিগুলোকে পরিবর্তিত করতে পারে অথবা কপিগুলো নিজেরাই পরিবর্তিত হতে পারে। একটি ভাইরাস এক কম্পিউটার থেকে অপর কম্পিউটারে যেতে পারে কেবলমাত্র যখন আক্রান্ত কম্পিউটারকে স্বাভাবিক কম্পিউটারটির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। যেমন: কোন ব্যবহারকারী ভাইরাসটিকে একটি নেট ওয়ার্কের মাধ্যমে পাঠাতে পারে বা কোন বহনযোগ্য মাধ্যম যথা ফ্লপি ডিস্ক, সিডি, ইউএসবি ড্রাইভ বা ইণ্টারনেটের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। এছাড়াও ভাইরাসসমূহ কোন নেট ওয়ার্ক ফাইল সিস্টেমকে আক্রান্ত করতে পারে, যার ফলে অন্যান্য কম্পিউটার যা ঐ সিস্টেমটি ব্যবহার করে সেগুলো আক্রান্ত হতে পারে। ভাইরাসকে কখনো কম্পিউটার ওয়ার্ম ও ট্রোজান হর্সেস এর সাথে মিলিয়ে ফেলা হয়। ট্রোজান হর্স হল একটি ফাইল যা এক্সিকিউটেড হবার আগ পর্যন্ত ক্ষতিহীন থাকে।
বর্তমানে অনেক পার্সোনাল কম্পিউটার (পিসি) ইণ্টারনেট ও লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত থাকে যা ক্ষতিকর কোড ছড়াতে সাহায্য করে। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব, ই-মেইল ও কম্পিউটার ফাইল শেয়ারিং এর মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমন ঘটতে পারে। কিছু ভাইরাসকে তৈরি করা হয় প্রোগ্রাম ধ্বংশ করা, ফাইল মুছে ফেলা বা হার্ড ডিস্ক পূণর্গঠনের মাধ্যমে কম্পিউটারকে ধ্বংশ করার মাধ্যমে। অনেক ভাইরাস কম্পিউটারের সরাসরি কোন ক্ষতি না করলেও নিজেদের অসংখ্য কপি তৈরি করে যা লেখা, ভিডিও বা অডি ও বার্তার মাধ্যমে তাদের উপস্থিতির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। নিরীহ দর্শন এই ভাইরাসগুলোও ব্যবহারকারীর অনেক সমস্যা তৈরি করতে পারে। এগুলো স্বাভাবিক প্রোগ্রামগুলোর প্রয়োজনীয় মেমোরি দখল করে। বেশ কিছু ভাইরাস বাগ তৈরি করে, যার ফলশ্রুতিতে সিস্টেম ক্র্যাশ বা তথ্য হারানোর সম্ভাবনা থাকে।
অপারেটিং সিস্টেম হচ্ছে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সম্পদ বা রিসোর্স ব্যবস্থাপনাকারী কতগুলি কম্পিউটার প্রোগ্রামের সমষ্টি। অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটার ও ব্যহারকারীদের ইনপুট নেয় এবং বিভিন্ন টাস্ক ও কম্পিউটারের অভ্যন্তরীণ সিস্টেম সম্পদগুলি বণ্টন ও ব্যবস্থাপনা করে ব্যবহারকারী ও অন্যান্য প্রোগ্রামকে সেবা প্রদান করে। মেমরি বণ্টন ও নিয়ন্ত্রণ, সিস্টেম অনুরোধগুলির অগ্রাধিকার নির্ণয়, ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ, কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং ও ফাইল সিস্টেম ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি অপারেটিং সিস্টেমের কাজ। পারেটিং সিস্টেম অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামগুলি চালাবার জন্য পরিবেশ তৈরি করে।এ কারনে কোন অপারেটিং সিস্টেম ব্যতীত কম্পিউটার কোন অ্যাপ্লিকেশন চালাতে পারে না এবং এটি ব্যতীত কম্পিউটার মূলত অচল। ব্যবহারকারীর কাছে অপারেটিং সিস্টেমের সবচেয়ে দৃশ্যমান রূপ হল কম্পিউটারের ইন্টারফেস।
উইন্ডোজ, লিনাক্স, ইউনিক্স, ম্যাক ওএস ও অ্যানড্রয়েড প্রচলিত কয়েকটি অপারেটিং সিস্টেম। এর মধ্যে লিনাক্স ও ইউনিক্স উন্মুক্ত অপারেটিং সিস্টেম । উইন্ডোজ ও অ্যানড্রয়েড হল যথাক্রমে মাইক্রোসফট ও গুগল এর স্বতাধিকারি ।এ ছাড়াও অনেক অপারেটিং সিস্টেম আছে।
নিচে কিছু নাম দেয়া হল-
একটি সার্ভার হল চলন্ত অনুরোধ একটি এ্যাপ্লিকেশনের যা ভোক্তা থেকে অনুরোধ গ্রহণ এবং সে অনুযায়ী তার প্রতিউত্তরে সক্ষম সফটওয়্যার। সার্ভার যে কোন কম্পিউটারে চলতে পারে, নিয়োজিত করা কম্পিউটারকে একক ভাবে "সার্ভার" বুঝায়। অনেক ক্ষেত্রে একটি কম্পিউটার বিভিন্ন সেবা দিতে পারে এবং বিভিন্ন সার্ভার চালু থাকতে পারে। শুধুমাত্র সার্ভারের উদ্দেশ্যে নিয়োজিত কম্পিউটারের সুবিধা হল নিরাপত্তা। এই কারনে বেশিরভাগ সার্ভারই দুর্দান্ত প্রক্রিয়ার এবং নকশা করা হয়েছে বিশেষ কম্পিউটারে চালানোর জন্য।
সার্ভার পরিচালিত হয় ক্লায়েন্ট-সার্ভার নকশায়। সার্ভার হল কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা চলছে অন্যান্য প্রোগ্রামের (ভোক্তা/ক্লায়েন্ট/ব্যবহারকারী) অনুরোধ সেবা দেওয়ার জন্য। সেহেতু সার্ভার ভোক্তার হয়ে কিছু কাজ করে। এটি ভোক্তাকে ডাটা, তথ্য, সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যারের সম্পদ ভাগাভাগি করার সুবিধা প্রদান করে। ভোক্তা সাধারণত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সার্ভারে যুক্ত হয় কিন্তু হয় একই কম্পিউটারে থাকতে পারে। ইন্টারনেট প্রটোকল নেটওয়ার্কিংয়ের আলোকে একটি সার্ভার হল একটি প্রোগ্রাম যা পরিচালিত হয় সকেট লিসেনার হিসেবে।
সার্ভারগুলো প্রায়শই একটি নেটওয়ার্কের প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করে সেটা হতে পারে একটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরের ব্যবহারকারীদের জন্য অথবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে জনসাধারনের জন্য। সাধারণত কম্পিউটিং সার্ভার হল ডাটাবেজ সার্ভার, ফাইল সার্ভার, মেইল সার্ভার, প্রিন্ট সার্ভার, ওয়েব সার্ভার, গেমিং সার্ভার এবং এ্যাপ্লিকেশন সার্ভার। অসংখ্য সিস্টেম ব্যবহার করে তাদের ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্কিং প্রতিরূপ যাতে ওয়েব সাইট এবং ইমেইল সেবাও রয়েছে। অন্য একটি বিকল্প মডেল বা আদর্শ হল পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্কিং বা স্তর-থেকে-স্তরে নেটওয়ার্কিং, এর মাধ্যমে সব কম্পিউটারই প্রয়োজন অনুসারে হয় সার্ভার না হয় ভোক্তা হিসেবে কাজ করে।
প্রাগৈতিহাসিক যুগে গণনার যন্ত্র উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রচেষ্টাকে কম্পিউটার ইতিহাস হিসেবে ধরা হয়। প্রাচীন কালে মানুষ একসময় সংখ্যা বুঝানোর জন্য ঝিনুক, নুড়ি, দড়ির গিট ইত্যাদি ব্যবহার করত। পরবর্তীতে গণনার কাজে বিভিন্ন কৌশল ও যন্ত্র ব্যবহার করে থাকলেও অ্যাবাকাস নামক একটি প্রাচীন গননা যন্ত্রকেই কম্পিউটারের ইতিহাসে প্রথম যন্ত্র হিসেবে ধরা হয়। এটি আবিষ্কৃত হয় খ্রিষ্টপূর্ব ২৪০০ সালে ব্যাবিলনে। অ্যাবাকাস ফ্রেমে সাজানো গুটির স্থান পরিবর্তন করে গননা করার যন্ত্র। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০/৫০০ অব্দে মিশরে বা চীনে গননা যন্ত্র হিসেবে অ্যাবাকাস তৈরি হয়।
১৬১৪ সালে লগারিদম প্রবর্তন করেন স্কটল্যান্ডের গণিতবিদ জন নেপিয়ার যার উপর ভিত্তি করে ১৬১৬ সালে জন নেপিয়ার গণনার কাজে ছাপা বা দাগ কাটাকাটি অথবা দন্ড ব্যবহার করেন। এসব দন্ড জন নেপিয়ার (John Napier) এর অস্থি নামে পরিচিত। ১৬৪২ সালে ১৯ বছর বয়স্ক ফরাসি বিজ্ঞানী ব্লেইজ প্যাসকেল সর্বপ্রথম যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর আবিষ্কার করেন যদিও এতে অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। তিনি দাঁতযুক্ত চাকা বা গিয়ারের সাহায্যে যোগ বিয়োগ করার পদ্ধতি চালু করেন। ১৬৭১ সালের জার্মান গণিতবিদ গটফ্রাইড ভন লিবনিজ প্যাসকেলের যন্ত্রের ভিত্তিতে চাকা ও দন্ড ব্যবহার করে গুণ ও ভাগের ক্ষমতাসম্পন্ন আরো উন্নত ও পূর্ণাঙ্গ ক্যালকুলেটর তৈরি করেন। তিনি যন্ত্রটির নাম দেন রিকোনিং যন্ত্র (Rechoning Mechine)। পরে ১৮২০ সালে টমাস ডি কোমার রিকোনিং যন্ত্রের পরিমার্জন করে লিবনিজের যন্ত্রকে জনপ্রিয় করে তোলেন।
উনিশ শতকের শুরুর দিকে আধুনিক একটি যন্ত্রের নির্মাণ ও ব্যবহারের ধারণা (যা কেবলমাত্র যান্ত্রিকভাবে, মানে যেকোনও রকম বুদ্ধিমত্তা ব্যতিরেকে, গাণিতিক হিসাব করতে পারে) প্রথম সোচ্চার ভাবে প্রচার করেন চার্লস ব্যাবেজ। তিনি এটির নাম দেন ডিফারেন্স ইন্জিন (Difference Engine)। এই ডিফারেন্স ইঞ্জিন নিয়ে কাজ করার সময় (১৮৩৩ সালে) তিনি অ্যানালিটিক্যাল ইন্জিন নামে আরও উন্নত ও সর্বজনীন একটি যন্ত্রে ধারনা লাভ করেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় যন্ত্র ও অর্থের অভাবে কোনোটির কাজই তিনি শেষ করতে পারেননি।
কম্পিউটার বিজ্ঞানের সত্যিকার সূচনা হয় অ্যালান টুরিং এর প্রথমে তাত্ত্বিক ও পরে ব্যবহারিক গবেষণার মাধ্যমে। বিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে আধুনিক কম্পিউটারের বিকাশ ঘটতে শুরু করে। ১৯৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবনের ফলে মাইক্রোকম্পিউটারের দ্রুত বিকাশ ঘটতে থাকে। বাজারে প্রচলিত হয় বিভিন্ন প্রকৃতি ও আকারের কম মূল্যের অনেক রকম পার্সোনাল কম্পিউটার (Personal Computer) বা পিসি (PC)। সে সঙ্গে উদ্ভাবিত হয়েছে অনেক রকম অপারেটিং সিস্টেম, প্রোগ্রামের ভাষা, অগণিত ব্যবহারিক প্যাকেজ প্রোগ্রাম। এরসাথে ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেটের এবং সংশ্লিষ্ট সেবা ও পরিসেবার। কম্পিউটার শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ও সম্প্রসারিত হয়েছে অসংখ্য প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কম্পিউটার শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সাম্প্রতিক কালে কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি (Information Technology) বা আইটি (IT) ব্যবসা-বাণিজ্যের বিরাট অংশ দখল করেছে এবং কর্মসংস্থান হয়ে পড়েছে অনেকাংশেই কম্পিউটার নির্ভর।
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টেল কর্পোরেশন ১৯৭১ সালে বাণিজ্যিকভাবে তৈরি বিশ্বের প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর - intel-4004 উদ্ভাবন করার পর থেকে বাজারে আসতে শুরু করে মাইক্রোপ্রসেসর ভিত্তিক কম্পিউটার। তখন থেকে কম্পিউটারের আকৃতি ও কার্যক্ষমতায় এক বিরাট বিপ্লব সাধিত হয়। ১৯৮১ সালে বাজারে আসে আই.বি.এম কোম্পানির পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসি। এর পর একের পর এক উদ্ভাবিত হতে থাকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোপ্রসেসর এবং তৈরি হতে থাকে শক্তিশালী পিসি। আই.বি.এম কোম্পানি প্রথম থেকেই আই.বি.এম কমপ্যাটিবল কম্পিউটার (IBM compatible computer) তৈরির ক্ষেত্রে কোনো বাধা-নিষেধ না রাখায় এ ধরনের কম্পিউটারগুলির মূল্য ব্যাপকহারে হ্রাস পায় এবং এর ব্যবহারও ক্রমাগত বাড়তে থাকে।এ সময় থেকেই বিশ্ব বিখ্যাত এই কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অাইবিএমকে(IBM) বলা হতে থাকে বিগ ব্লু ।একই সময় আই.বি.এম কোম্পানির পাশাপাশি অ্যাপল কম্পিউটার ইনকর্পোরেট (Apple Computer Inc) তাদের উদ্ভাবিত অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ (Apple-Macintosh) কম্পিউটার বাজারে ছাড়ে। কিন্তু অ্যাপল কোম্পানি তাদের কমপ্যাটিবল কম্পিউটার তৈরির ক্ষেত্রে কোনোরূপ উদারতা প্রদর্শন না করায় ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের মূল্য থেকে যায় অত্যধিক বেশি, যার ফলে অ্যাপল তেমন জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারে নি। তবে বিশেষ ধরনের কিছু ব্যবহারিক সুবিধার কারণে মূলত মুদ্রণ শিল্পে অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হতো।
প্রয়োগের তারতম্যের ভিত্তিতে কম্পিউটারকে দুভাগে ভাগ করা যায়।
সাধারণ ব্যবহারিক কম্পিউটার।
বিশেষ ব্যবহারিক কম্পিউটার।
আবার কম্পিউটারের গঠন ও প্রচলন নীতির ভিত্তিতে একে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
এনালগ কম্পিউটার।
ডিজিটাল কম্পিউটার।
হাইব্রিড কম্পিউটার।
আকার, সামর্থ্য, দাম ও ব্যবহারের গুরুত্বের ভিত্তিতে ডিজিটাল কম্পিউটারকে আবার চার ভাগে ভাগ করা যায়।
মাইক্রো কম্পিউটার।
মিনি কম্পিউটার।
মেইনফ্রেম কম্পিউটার।
সুপার কম্পিউটার।
নিচে কম্পিউটারের পূর্ণাঙ্গ শ্রেণীবিভাগ দেখানো হলো :
এনালগ কম্পিউটার
যে কম্পিউটার একটি রাশিকে অপর একটি রাশির সাপেক্ষে পরিমাপ করতে পারে,তাই এনালগ কম্পিউটার। এটি উষ্ণতা বা অন্যান্য পরিমাপ যা নিয়মিত পরিবর্তিত হয় তা রেকর্ড করতে পারে।মোটর গাড়ির বেগ নির্ণায়ক যন্ত্র এনালগ কম্পিউটারের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
ডিজিটাল কম্পিউটার
ডিজিটাল কম্পিউটার দুই ধরনের বৈদ্যুতিক ভোল্টেজ দ্বারা সকল কিছু প্রকাশ করা হয়। ভোল্টেজের উপস্থিতিকে ১ এবং অনুপস্থিতিকে ০ দ্বারা প্রকাশ করা হয় এটি যে কোন গণিতের যোগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে এবং বিয়োগ,গুণ ও ভাগের মতো অন্যান্য অপারেশন সম্পাদন করে। আধুনিক সকল কম্পিউটার ডিজিটাল কম্পিউটার।
হাইব্রিড কম্পিউটার
হাইব্রিড কম্পিউটার হলো এমন একটি কম্পিউটার যা এনালগ ও ডিজিটাল কম্পিউটারের সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যগুলোর সমন্বয়ে গঠিত। এটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহার করা হয়। সুতরাং বলা যায়, প্রযুক্তি ও ভিত্তিগত দিক থেকে এনালগ ও ডিজিটাল কম্পিউটারের আংশিক সমন্বয়ই হচ্ছে হাইব্রিড কম্পিউটার। সাধারণত হাইব্রিড কম্পিউটারে তথ্য সংগ্রহ করা হয় অ্যানালগ পদ্ধতিতে এবং গণনা করা হয় ডিজিটাল পদ্ধতিতে। যেমন আবহাওয়া দপ্তরে ব্যবহৃত হাইব্রিড কম্পিউটার অ্যানালগ পদ্ধতিতে বায়ুচাপ,তাপ ইত্যাদি পরিমাপ করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে গণনা করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়ে থাকে।
মেইনফ্রেম কম্পিউটার
মিনি কম্পিউটার
যে কম্পিউটার টার্মিনাল লাগিয়ে প্রায় এক সাথে অর্ধ শতাধিক ব্যবহারকারী ব্যবহার করতে পারে তাই মিনি কম্পিউটার। এটা শিল্প-বাণিজ্য ও গবেষণাগারে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।যেমন – pdp-11,ibms/36,ncrs/9290, IBM 9375.
মাইক্রো কম্পিউটার
মাইক্রো কম্পিউটারকে পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসি বলেও অভিহিত করা হয়। ইন্টারফেস চিপ (Mother Board) , একটি মাইক্রোপ্রসেসর cpu, ram, rom, hard disk etc. সহযোগে মাইক্রো কম্পিউটার গঠিত হয়। দৈনন্দিন জীবনের সর্বক্ষেত্রে এ কম্পিউটারের ব্যবহার দেখা যায়।ম্যকিনটোস আইবিএম পিসি এ ধরনের কম্পিউটার।
সুপার কম্পিউটার
অত্যন্ত শক্তিশালী ও দ্রুতগতিসম্পন্ন কম্পিউটারকে সুপার কম্পিউটার বলে। এ কম্পিউটারের গতি প্রায় প্রতি সেকেন্ডে ১ বিলিয়ন ক্যারেক্টর। নো দেশের আদমশুমারির মতো বিশাল তথ্য ব্যবস্হাপনা করার মতো স্মৃতিভান্ডার বিশিষ্ট কম্পিউটার হচ্ছে সুপার কম্পিউটার। CRAY 1, supers xll এ ধরনের কম্পিউটার।
ট্যাবলেট কম্পিউটার
ট্যাবলেট কম্পিউটার এক ধরণের মাইক্রো কম্পিউটার। যা পাম টপ কম্পিউটার নামে পরিচিত। এটি স্পর্শপর্দা সম্বলিত প্রযুক্তি। এটি এন্ড্রোয়েড এবং উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে চলে।
অ্যান্টিভাইরাস (ইংরেজি: Antivirus) বলতে সাধারণভাবে কম্পিউটারের ভাইরাস রোধ করার জন্য ব্যবহৃত একধরনের প্রোগ্রাম যা কম্পিউটারের সংরক্ষণ এলাকা বা হার্ডডিস্ক বা যে কোন রিমুভেবল ডিস্ক হতে ভাইরাস সনাক্তকরন, প্রতিরোধ ও প্রতিকার করতে পারে।
অ্যান্টিভাইরাস হলো এক প্রকার ইউটিলিটি সফটওয়্যার যা ম্যালওয়্যারের সাথে সম্পৃক্ত সফটওয়্যারকে কম্পিউটারে অনুপ্রবেশে বাধা প্রদান করে। ম্যালওয়্যারকে কম্পিউটারে ঢুকতে না দেয়া বা ঠেকানোর অন্যতম ও প্রধান উপায় হলো অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা। এটি আগে থেকে ইউজারকে জানিয়ে দেয় যে কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার ঢুকতে চাইছে অথবা কোন এক্সটার্নাল স্টোরেজ পিসি’তে প্রবেশের আগে চেক করে নেয়া স্টোরেজে কোনো প্রকার ক্ষতিকারক সফটওয়্যার আছে কিনা। এভাবে একটি ভালো অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার কম্পিউটারের সেই সাথে মূল্যবান ডাটার দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষার ব্যবস্থা করে থাকে।
ব্রাউজারের দূর্বলতা, প্লাগইনস, বিভিন্ন প্রকার লেনদেনে, অপারেটিং সিস্টেম প্রভৃতির জন্য অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার থাকা প্রয়োজন। অনলাইনে লেনদেন ক্ষেত্রে পিসি’তে অ্যান্টিভাইরাস থাকা অবশ্যই প্রয়োজন, এখন অনেক অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার লেনদেনের সিকিউরিটি দিয়ে থাকে।
কয়েকটি অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রামের নাম নিচে দেয়া হল:
সিস্টেম সফটওয়্যার একটি অপরিহার্য কম্পিউটার সফটওয়্যার যেটার নকশা করা হয়েছে, কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারকে পরিচালনা করার জন্য এবং এপ্লিকেশন সফটওয়্যারগুলোকে কাজ করার উপযোগী পরিবেশ প্রদানের জন্য।
সাধারন সিস্টেম সফটওয়্যারের প্রকারগুলো হল:
কিছু কিছু প্রকাশনায়, সিস্টেম সফটওয়্যারের ব্যাখ্যায় সফটওয়্যার উন্নয়নের টুলস যেমন কম্পাইলার, লিঙ্কার অথবা ডিভাগার ইত্যাদিকেও এর আওতায় ফেলা হয়েছে।
সিস্টেম সফটওয়্যারের বিপরীতে, এপ্লিকেশন সফটওয়্যার বলতে বুঝায় যে সফটওয়্যার দ্বারা ব্যবহারকারী লেখা লিখতে পারে, গেমস খেলতে পারে, গান শুনতে পারে অথবা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে।
সিস্টেম সফটওয়্যারের প্রকারভেদ
সিস্টেম সফটওয়্যার অপারেটিং সিস্টেম এবং কম্পিউটার সিস্টেম ব্যবহার করার সুযোগ দেয়। এটাতে আছে ডাইগনস্টিক টুলস, কম্পাইলার, সার্ভার, ইউটিলিটি, ভাষা পরিবর্তনের সুযোগ, ডেটা আদান প্রদানের সুযোগ, ডেটাবেস সিস্টেম এবং আরো অনেক কিছু। সিস্টেম সফটওয়্যারের উদ্দেশ্য হল, এপ্লিকেশনগুলোকে পৃথক করা প্রোগ্রামারদের জন্য যাতে জটিলতা এবং বিশেষ ব্যবহার এড়িয়ে চলা যায়।
বিশেষ ধরনের সিস্টেম সফটওয়্যারের মধ্যে আছে:
যদি সিস্টেম সফটওয়্যারকে স্থায়ী স্মৃতিতে জমা রাখা হয় একে ফার্মওয়্যার বলে যেমন, আইসি।
টেলিগ্রাফি হচ্ছে দূর দূরান্তে লিখিত বার্তা বা পত্র প্রেরণের এমন একটি পদ্ধতি যা মূল লিখিত পত্রটিকে প্রেরণ না করে সাধারনতঃ তারের মাধ্যমে বার্তাটি পাঠিয়ে দেয় । রেডিও টেলিগ্রাফি বা বেতার টেলিগ্রাফিতে বার্তা প্রেরণের জন্য রেডিও ব্যবহার করা হয়। তথ্য এবং উপাত্তের আধুনিক ধারা যেমন ফ্যাক্স, ই-মেইল, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ইত্যাদিও সামগ্রিকভাবে টেলিগ্রাফির অন্তর্গত। (টেলিগ্রাফ হচ্ছে দূর দূরান্তে বার্তা গ্রহণ বা প্রেরণ করবার অর্থাৎ টেলিগ্রাফির একটি যন্ত্রবিশেষ। ) বেতার টেলিগ্রাফিকে সি ডব্লিউ (CW) বলা হয়। সি ডব্লিউ হচ্ছে কন্টিনিউয়াস ওয়েভের সংক্ষিপ্ত রূপ।
টেলিগ্রাফ যন্ত্রের মাধ্যমে প্রেরিত মোর্স কোডে লিখিত টেলিগ্রাফি বার্তাকে টেলিগ্রাম বা কেবলগ্রাম, সংক্ষেপে কেবল বা তারবার্তা, বলা হতো। পরবর্তীতে টেলেক্স নেটওয়ার্কের (বিভিন্ন স্থানে রক্ষিত টেলিপ্রিন্টারের নেটওয়ার্ক) মাধ্যমে প্রেরিত টেলিগ্রামকে টেলেক্স বার্তা বলা হতো। টেলিফোনের মাধ্যমে বহুদূরে বা দেশ-বিদেশে কথা বলা সহজলভ্য হওয়ার আগে টেলিগ্রাম সুবিধা অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। ব্যবসায়িক যোগাযোগ তো বটেই, টেলিগ্রামের মাধ্যমে এমনকি ব্যবসায়িক দলিল, এবং চুক্তিপত্রও সম্পাদিত হতো। ফ্যাক্স টেলিগ্রাফের মাধ্যমে প্রেরিত ছবিকে তারচিত্র (Wire picture) বা তারছবি (wire photo) বলা হতো।
ওরাকল কর্পোরেশন (ইংরেজি: Oracle Corporation) হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বহুজাতিক কম্পিউটার প্রযুক্তি কর্পোরেশন যার সদর দফতর ক্যালিফোর্নিয়ার রেডউড সিটিতে অবস্থিত। কোম্পানিটি কম্পিউটার হার্ডওয়্যার সিস্টেম এবং এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যার পণ্যতে পারদর্শী - বিশেষভাবে এর নিজস্ব ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের ব্রান্ডে। ওরাকল মাইক্রোসফট এবং আইবিএম পরে, আয় অনুসারে তৃতীয় বৃহত্তম সফটওয়্যার নির্মাণকারী।
কোম্পানিটি ডেটাবেজ উন্নয়ন এবং মধ্যম-স্তর সফটওয়্যারের সিস্টেম, এন্টারপ্রাইজ সম্পদ পরিকল্পনা সফটওয়্যার (ইআরপি), ক্রেতা সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার (সিআরএম) এবং সরবরাহ ব্যবস্থাপনা (এসসিএম) সফটওয়্যারের জন্য সরঞ্জাম তৈরিও করে।
ল্যারি এল্লিসোন ওরাকলের একজন সমবায়-প্রতিষ্ঠাতা, তিনি ওরাকলের সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
হার্ড ডিস্ক (এইচডিডি), হার্ড ডিস্ক, হার্ড ড্রাইভ বা ফিক্সড ড্রাইভ হলো ডাটা সংরক্ষণের যন্ত্র যা তথ্য জমা এবং পরবর্তী সময়ে পড়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। হার্ড ডিস্কে সমকেন্দ্রিক একাধিক চাকতি থাকে। একে প্লেটারস বলে। এগুলো চৌম্বকীয় ধাতু দিয়ে আচ্ছাদিত থাকে। প্লেটারসগুলো চৌম্বকীয় হেডস বা মাথার সাথে জোড়া দেয়া থাকে। এগুলোর সাথে আর একটি সক্রিয় একচুয়েটর আর্ম বা হত থাকে। এই একচুয়েটর হাত প্লেটারগুলোর উপরিভাগ থেকে তথ্য পড়তে এবং তথ্য জমা করতে ব্যবহৃত হয়। ডাটাগুলো ড্রাইভে স্থানান্তরিত হয় র্যানডম-একসেস প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে। এর মানে হল ডাটা যখন ড্রাইভে রাখা হয় এগুলো পর পর সাজানো হয় না বরং যেকোন খালি জায়গায় ডাটা জমা করা হয়। হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ কম্পিউটার বন্ধ করার পরও ডাটা সংরক্ষন করে রাখে।
আইবিএম সর্ব প্রথম ১৯৫৬ সালে হার্ড ডিস্ক উদ্ভাবন করে এবং ১৯৬০ দশকে সাধারন কম্পিউটারের দ্বিতীয় সংরক্ষন মাধ্যম হিসেবে কম্পিউটারগুলোতে ব্যবহৃত হতে থাকে। প্রতিনিয়ত এটির উন্নয়নের ফলে আজকের দিনের সার্ভার থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত কম্পিউটারে এর ব্যবহার লক্ষনীয়। বর্তমানে অধিকাংশ কম্পিউটারে তথ্য সংরক্ষণের স্থায়ী (non-volatile) ব্যবস্থা হিসাবে হার্ড ডিস্ক ব্যবহৃত হয়। হার্ড ডিস্ক ছাড়াও বর্তমানে ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার, মিউজিক প্লেয়ার প্রভৃতি যন্ত্রে হার্ড ডিস্ক ব্যবহার করা হয়। ২০০টি কোম্পানীরও বেশি কোম্পানী এই ড্রাইভ বিভিন্ন সময় প্রস্তুত করেছে। বর্তমানে এটি প্রস্তুত করছে বেশকিছু খ্যাতিমান কোম্পানী যাদের মধ্যে সিগেট, তোশিবা এবং ওয়েষ্টার্ন ডিজিটাল উল্লেখ্যযোগ্য। ২০১৩ সালে বিশ্বব্যাপি ডিস্ক স্টোরেজের আয় ছিল $৩২ বিলিয়ন, এটি ২০১২ সাল থেকে ৩% কম ছিল।
একটি হার্ড ড্রাইভের প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য হল এর ধারণক্ষমতা ও কার্যকারিতা। ধারণক্ষমতাকে উল্লেখ্য করা হয় ১০০০ ইউনিটের উপসর্গ দিয়ে যেমন ১ টেরাবাইট ড্রাইভের ধারণক্ষমতা হল ১০০০ গিগাবাইট। এই ধারনক্ষমতার সবটাই ব্যবহারকারীর জন্য পুরোপুরি থাকে না কারন ফাইল সিস্টেম এবং কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম ও অভ্যন্তরীন বাড়তি জায়গা ব্যবহার করা হয় ভুল সংশোধন ও পুনরুদ্ধার কাজের জন্য। কার্যকারিতাকে বোঝানো হয় হার্ড ড্রাইভের একসেস টাইম ও ল্যাটেন্সি বৈশিষ্ট্যের উপর। একসেস টাইম হল কতটুকু সময়ে একটি হেড কোন নির্দিষ্ট ট্র্যাক বা সিলিন্ডারের যায় এবং ল্যাটেন্সি হল একটি সেক্টর কত দ্রুত হেডের নিচে আসে সেই সময়ের সমষ্টি। ল্যাটেন্সির ব্যাপারটি হার্ড ড্রাইভের রোটেশনাল স্পিড যা রিভোলুশন পার মিনিট দিয়ে মাপা হয় তার সাথে সম্পর্কিত। এছাড়াও হার্ড ড্রাইভে কত গতিতে ডাটা স্থানান্তর (ডাটা রেট) হয় সেটিও অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য বলে বিবেচিত হয়।
সাধারণত ব্যবহারিক ক্ষেত্রে পার্টিশনের মাধ্যমে একটি হার্ড ডিস্ককে কত গুল ড্রাইভ এ ভাগ করা হয় । যার মধ্যে একটি ড্রাইভ কম্পিউটার পরিচালনার জন্য অপারেটিং সিস্টেম সহ প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার গুল ধারণ করে ।এটিকে সাধারণত C ড্রাইভ বলে।
গ্রাফিক্স কার্ড , ভিডিও কার্ড, ভিডিও অ্যাডাপ্টার, গ্রাফিক্স এক্সেলেরেটর কার্ড, ডিসপ্লে অ্যাডাপ্টার ইত্যাদি নামেও পরিচিত। এর কাজ , কম্পিউটারের জন্য আউট পুট ইমেজ তৈরী করা। আর বর্তমানে বাজারে যে সমস্ত গ্রাফিক্স কার্ড আছে, তাতে আরো বার্তি হিসেবে আছে, 3D সেন্স, ভিডিও ক্যাপচার, TV টিউনার, MPEG-2/MPEG-4 ডিকোডিং, TV Out সহ অনেক অনেক ফিচারস।একটি গ্রাফিক্স কার্ড কে দেখলেই এর প্রধান কম্পোনেন্ট গুলো দেখা যায়,
গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট বা GPU
ভিডিও বায়োস।
ভিডিও মেমোরি।
ইউএসবি ফ্লাশ ড্রাইভ বা বা পেনড্রাইভ ফ্লাশ ডাটা স্টোরেজ ডিভাইস এবং ইউএসবি (ইউনিভারসাল সিরিয়াল বাস) ইন্টারফেস এর সমন্বয়ে গঠিত। ইউএসবি ফ্লাশ ড্রাইভ সাধারণত সিস্টেম থেকে বিচ্ছিন্নকরণযোগ্য এবং এতে পুনরায় ডাটা লিখা যায়। এটি বাহ্যিকভাবে ফ্লপি ডিস্ক বা অপটিক্যাল ডিস্ক থেকে অনেক ছোট । অধিকাংশ ইউএসবি ফ্লাশ ড্রাইভের ওজন ৩০ গ্রাম এর চেয়ে কম । আকার ও খরচ ঠিক রেখে ২০১৩ সালে ৫১২ গিগাবাইট ধারণক্ষমতা পর্যন্ত ইউ এস বি ফ্লাশ ড্রাইভ তৈরী করা সম্ভব হয়েছে । ২০১৩ সালের কনজিউমার ইলেক্ট্রনিক শো'তে ১ টেরাবাইট ধারণক্ষমতার ফ্লাশ ড্রাইভ দেখানো হয়েছে এবং পরে সে বছরেই তা বাজারে আসে। কিছু ইউএসবি ফ্লাশ ড্রাইভে ১০,০০,০০০ বার তথ্য লেখা/মোছা যায় এবং মেমোরি চিপের ধরনের উপর ভিত্তি করে ১০ বছর পর্যন্ত দোকানে বিক্রয়ের জন্য রাখা যেতে পারে।
ফ্লপি ডিস্ক হচ্ছে পরিবহনযোগ্য হার্ড ডিস্কের চেয়ে ছোট এক প্রকার স্মৃতি যা ডিস্ক যা হার্ডডিস্কের মত ডাটা জমা রাখতে বা দিতে পারে তবে এটি প্রয়োজন মত কম্পিউটারে সংযুক্ত করা বা বের করা যায় ।ফ্লপি ডিস্ক যে কারণে ব্যবহার করা হত ইউএসবি ফ্লাশ ড্রাইভও একই কারণে ব্যবহার করা হয় ।কিন্তু ইউএসবি ফ্লাশ ড্রাইভ আকারে ছোট, অনেক দ্রুত, হাজার গুণ বেশি ধারণক্ষমতা এবং চলমান পার্টস না থাকায় অনেক বেশি টেকসই এবং নির্ভরযোগ্য। সেইসঙ্গে এগুলোতে ফ্লপি ডিস্কের মত বিদ্যুতচৌম্বকীয় বিঘ্নতা ঘটে না এবং অপটিক্যাল ডিস্কের মত দাগ পড়ার ভয় নেই।
কমপ্যাক্ট ডিস্ক (Compact Disc) ইংরেজি শব্দ।তবে এটি CD নামে বহুল পরিচিত । তথ্য ধারণের একটি অপটিক্যাল স্টোরেজ ডিভাইস দেখতে চাকতি বিশেষ,যা ডিজিটাল তথ্য যেমন- লেখা , ছবি, ভিডিও, গান প্রভৃতি রাখার একটি প্রযুক্তি। গোলাকৃতির ও কয়েক মিলিমিটার পুরু চাঁচ নির্মিত এই ডিস্ক কম্পিউটারের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে। আদর্শ সিডিগুলোর ব্যাস প্রায় ১২০ মি.মি. বা ৪.৭ ইঞ্চি হয়ে থাকে এবং এতে প্রায় ৭০০ মেগাবাইট (৭০০×২^২০ বাইট) তথ্য সংরক্ষণ করা যায়। এটি প্রি-রেকর্ডেড, রেকর্ডেবল, এবং রিরাইটেবল তিন ধরনের হয়ে থাকে। এর থেকে তথ্য লিখা বা পড়ার জন্য একটি অপটিক্যাল ডিভাইস বা ড্রাইভ বা চালক প্রয়োজন হয় । একে CD ROM বলে ।
মাদারবোর্ড হল কম্পিউটারের একটি জটিল ইলেকট্রনিক সিস্টেম এর মূল সার্কিট বোর্ড(পিসিবি)। অন্যকথায় কম্পিউটারের প্রধান প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ডটিই মাদারবোর্ড । মাদরবোর্ডকে কখনও কখনও মেইনবোর্ড বা সিস্টেম বোর্ড -ও বলা হয়। তবে ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে এটিকে লজিকবোর্ড ও বলা হয়। মাদারবোর্ডের মাধ্যমে কম্পিউটারের সকল যন্ত্রাংশকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত করা হয়।
সাধারণ ডেস্কটপ কম্পিউটারে মাদারবোর্ডের সাথে মাইক্রোপ্রসেসর,প্রধান মেমরি ও কম্পিউটারের অন্যান্য অপরিহার্য অংশযুক্ত থাকে। অন্যান্য অংশের মধ্যে আছে শব্দ ও ভিডিও নিয়ন্ত্রক, অতিরিক্ত তথ্যভান্ডার, বিভিন্ন প্লাগইন কার্ড যেমন ল্যান কার্ড ইত্যাদি। কি-বোর্ড,মাউসসহ সব ইনপুট/আউটপুট যন্ত্রাংশও মাদারবোর্ডের সাথে যুক্ত থাকে।
মাদারবোর্ড প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আসুস,গিগাবাইট,ইন্টেল,ইসিএস ইত্যাদি। আসুস বর্তমানে পৃথিবীর সবথেকে বড় মাদারবোর্ড প্রস্তুতকারক কোম্পানি।
সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট বা সিপিইউ-
কম্পিউটার ব্যবস্থার মস্তিষ্ককে বলা হয় সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (সি পি ইউ বা কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়ণ বিভাগ)। বস্তুত, এটিই কম্পিউটারের মূল অংশ। কারন এখান থেকেই কম্পিউটারের সমস্ত কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হয়।
কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরন ইউনিট (সিপিইউ) হল একটি কম্পিউটারের মধ্যাবস্থিত বৈদ্যুতিক পরিবাহি যন্ত্র যা প্রোগ্রামের দেয়া নির্দেশনা পালন করে। বিশেষভাবে দেয়া এসব নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে এটি বিভিন্ন গাণিতিক, যৌক্তিক কার্যাবলি, নিয়ন্ত্রন ও ইনপুট আউটপুট কার্যাদি সম্পন্ন করে।
বছরের পর বছর নানাভাবে উন্নীত, পরিমার্জিত বিভিন্ন সংস্করন করার ফলে এতে নকশা, আকৃতিগত এবং বাস্তবায়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে কিন্তু এর মূল কাজের ধরন একই রকম রয়ে গেছে। সিপিইউ'র প্রধান উপাদানগুলোর মধ্যে আছে এএলইউ (গাণিতিক যুক্তি অংশ), সিইউ (নিয়ন্ত্রন অংশ)। এএলইউ গাণিতিক এবং যুক্তিমুলক কাজগুলো সম্পাদন করে আর সিইউ স্মৃতি থেকে নির্দেশনা নেয়, নির্দেশনাগুলোর সংকেত উদ্ধার করে সেগুলোকে সম্পাদন করে এবং প্রয়োজন মতে এএলইউ থেকে সেবা ব্যবহার করে।
বর্তমানের আধুনিক সিপিইউগুলো মাইক্রোপ্রসেসরে তৈরী মানে একটি মাত্র সমন্বিত চিপে এদের অবস্থান। কিছু কিছু কম্পিউটারে দেখা যায় একের অধিক সিপিইউ রয়েছে একটি মাত্র চিপে, যার মানে এগুলো বহুমাত্রিক প্রক্রিয়াকরন করতে সক্ষম। তাই এগুলোকে বহু-উৎস বিশিষ্ট প্রক্রিয়াকরন ইউনিট বলে। সমস্ত সমন্বিত চিপে সিপিইউ'র পাশাপাশি মেমোরি, পেরিফেরাল ডিভাইসগুলো এবং অন্যান্য কম্পিউটারের উপাদানগুলো থাকতে পারে। এরূপ যন্ত্রাংশগুলোকে বিভিন্নভাবে ডাকা হয় যেমন মাইক্রোকন্ট্রোলার বা সিস্টেম অন এ চিপ।
কম্পিউটারের আরেক অন্যতম গুরুত্বপুর্র্ন অংশ হচ্ছে এর মেমোরি, যা ছাড়া কম্পিউটারের কোন কাজই করা সম্ভব হবে না। কম্পিউটারের সিপিইউকে যদি প্রতিবারই প্রতিটি ডাটা সংগ্রহ করার জন্য হার্ড ডিস্কে অ্যাকসেস নিতে হত তাহলে সিপিইউ তথা কম্পিউটারের গতি খুবই ধীর হয়ে যেত। এ কারণেই কম্পিউটার চলাকালীন এসব ডাটাকে রাখা হয় প্রাথমিক স্মৃতি বা প্রাইমারি মেমোরিতে, যেখান থেকে সিপিইউ খুব দ্রুত ডাটা অ্যাকসেস নিতে পারে। এসব মেমোরির কাজ হচ্ছে ডাটাকে অস্থায়ীভাবে সংরক্ষন করে রাখা। কম্পিউটারে তথ্য প্রক্রিয়াকরন শুরু হয় ইনপুট এর মাধ্যমে যা সিপিইউ প্রক্রিয়াকরন শেষ করে তা আউটপুটে প্রেরণ করে । র্যামের বাস ওয়াইড( Bus Width )ও প্রসেসরের ক্যাশ মেমোরি( Cache Memory ) কম্পিউটারের তথ্য প্রক্রিয়াকরনের গতিকে নিয়ন্ত্রন করে ।
কি বোর্ড ও মাউস এই সি পি ইউ-র সঙ্গেই তারের মাধ্যমে যুক্ত থাকে। অর্থাৎ, কি বোর্ড বা মাউসের মাধ্যমে যে কাজ করা হয়, তার ফলাফল সি পি ইউ হয়ে কম্পিউটারের পর্দায় আমরা দেখতে পাই। সি পি ইউ-র সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ যুক্ত থাকে। সি পি ইউ-এ পাওয়ার নামক একটি সুইচ আছে, যেটি টিপে কম্পিউটার চালু করতে হয়।
কন্ট্রোল ইউনিট -
কোনও কম্পিউটার ব্যবস্থায় এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় তথ্যের জোগানকে বজায় রাখে কন্ট্রোল ইউনিট। বস্তুত, কন্ট্রোল ইউনিট একটি কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র বা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের ভূমিকা পালন করে। একটি কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদানকে পরিচালনা করে কন্ট্রোল ইউনিট।
প্রাইমারি স্টোরেজ ইউনিট-
কম্পিউটারে যে তথ্য ঢোকানো হয়, তা জমা থাকে তার স্মৃতি বা মেমোরিতে। কম্পিউটারের স্মৃতিশক্তি বা স্মৃতি ভাণ্ডারে তথ্য ধারণের ক্ষমতা বিপুল। বস্তুত, কম্পিউটারের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে তার স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। কম্পিউটার তার স্মৃতিতে নানাবিধ তথ্য শুধু জমিয়েই রাখে না, ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুযায়ী তা জোগানও দেয়।
কম্পিউটারের স্মৃতিকে দু’ ভাগে ভাগ করা যায় —১)মূল স্মৃতি বা প্রাথমিক পর্যায়ে সংরক্ষিত স্মৃতি (মেইন মেমোরি বা প্রাইমারি স্টোরেজ) এবং (২) অনুবর্তী পর্যায়ে সংরক্ষিত স্মৃতি (সেকেন্ডারি স্টোরেজ)। মূল স্মৃতি আবার দু’ রকমের। (ক) শুধুমাত্র পাঠযোগ্য স্মৃতি বা রিড অনলি মেমোরি (Read Only Memory) বা সংক্ষেপে (ROM) এবং (খ) অবাধ ব্যবহারযোগ্য স্মৃতি বা র্যানডম অ্যাক্সেস মেমোরি (Random Access Memory) বা সংক্ষেপে র্যাম (RAM)।
অ্যারিথমেটিক অ্যান্ড লজিক ইউনিট (এ এল ইউ ) -
এটিকে কম্পিউটারের গণনা শাখা বলা যেতে পারে। অঙ্ক ও যুক্তি সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্ম করে এ এল ইউ। শুধু সমস্ত রকম গণনার কাজই নয়, সেগুলির তুলনাও করা হয় এ এল ইউ-এর মাধ্যমে। প্রকৃতপক্ষে, কম্পিউটারের প্রসেসর (Processor) নামে একটি বৈদ্যুতিন যন্ত্রাংশ থাকে, যার আবার একটি অংশ এ এল ইউ। এর কাজের গতি মানুষের কল্পনার বাইরে। কিন্তু প্রসেসর যদি স্মৃতি থেকে তথ্য না পায়, তা হলে তার পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়। যে হেতু প্রসেসরের গতি বেশি, তাই সে যদি একই রকম উচ্চগতিসম্পন্ন বৈদ্যুতিন স্মৃতি থেকে তথ্য আহরণ করতে পারে, তা হলেই তার পক্ষে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করা সম্ভব। কাজেই তাকে র্যামের কাছ থেকে তথ্য নিতে হয়। অপর পক্ষে র্যামের কয়েকটি অসুবিধা আছে। যদিও র্যামের পক্ষে উচ্চ গতিতে তথ্য সরবরাহ করা সম্ভব, কিন্তু র্যামের সঞ্চিত তথ্য কম্পিউটার বন্ধ করলে মুছে যায়। তা ছাড়া র্যামের তথ্যধারণ ক্ষমতাও সীমিত। এ ক্ষেত্রে হার্ড ডিস্ক অনেক তথ্য চিরন্তন ভাবে ধরে রাখতে পারলেও একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা ছাড়িয়ে দ্রুতগতিতে তথ্য সরবরাহ করতে পারে না। প্রসেসর ও হার্ড ডিস্কের সমন্বয়ে কম্পিউটারের এমন একটি ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে হার্ড ডিস্কে সঞ্চিত তথ্য প্রয়োজন অনুযায়ী র্যামে সঞ্চিত হয় আর প্রসেসর তার দরকারমতো র্যাম থেকে তথ্য জোগাড় করতে পারে।
প্রানিদেহের সাথে কম্পিউটারের তুলনা করলে বলা যায় , কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার হচ্ছে দেহ আর সফটওয়্যার হচ্ছে প্রাণশক্তি।
হার্ডওয়্যার-
একটি কম্পিউটার ব্যবস্থার বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট কার্যকরী অংশ বা যন্ত্রাংশকে হার্ডওয়্যার বলে। যেমন, সিস্টেম ইউনিট বা পরিচালনা শাখা (যা কম্পিউটারের ভিতর থাকে), মনিটর, যাতে থাকে কম্পিউটারের পর্দা, কি বোর্ড, মাউস, প্রিন্টার, স্ক্যানার, স্পিকার এবং জয় স্টিক।
কম্পিউটার হার্ডওয়্যারকে তিনভাগে ভাগ করা হয়-
সফটওয়্যার-
বিভিন্ন প্রোগ্রাম বা পদ্ধতি বা প্রণালীকে কাজে লাগিয়ে কম্পিউটারের তথ্যকে ব্যবহার করা হয়। সফটওয়্যার বলতে এই সব প্রোগ্রামকেই বোঝায়। বস্তুত, একেকটি সফটওয়্যার প্রোগ্রাম কম্পিউটারকে নির্দেশ দেয়, কী করতে হবে। সফটওয়্যারে নির্দেশনায় কোন ভুল থাকলে তাকে বাগ বলে। সফটওয়্যার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।
কম্পিউটার সফটওয়্যারকে তিনভাগে ভাগ করা হয়-
মাইক্রোসফট কর্পোরেশন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক একটি কম্পিউটার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। এটি বিভিন্ন কম্পিউটার ডিভাইসের জন্য সফটওয়্যার তৈরি, লাইসেন্স দেওয়া এবং পৃষ্টপোষকতা করে থাকে।এটির সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের রেডমন্ড শহরে অবস্থিত। এদের সবচেয়ে জনপ্রিয় সফটওয়্যারগুলো হল মাইক্রোসফট উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম এবং মাইক্রোসফট অফিস। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ও সহ প্রতিষ্ঠাতা পল অ্যালান ১৯৭৫ সালের ৪ এপ্রিল মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠিত করেন।বর্তমানে মাইক্রোসফটের সিইও হলেন সত্য নাদেলা ।
মাইক্রোসফট উইন্ডোজ মাইক্রোসফট কর্পোরেশন দ্বারা তৈরি এবং বিক্রিত গ্রাফিকাল অপারেটিং সিস্টেমের পরিবার।
গ্রাফিকাল অপারেটিং সিস্টেমের প্রতি মানুষের ক্রমবর্ধমান আগ্রহের প্রেক্ষিতে ১৯৮৫ সালের নভেম্বরে মাইক্রোসফট তার ডস (ডিস্ক অপারেটিং সিস্টেম) এর বাড়তি সুবিধা হিসেবে উইন্ডোজ বাজারে আনে। এর পর এখন পর্যন্ত এটি ব্যক্তিগত বা ডেস্কটপ কম্পিউটারে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।মাইক্রোসফটের সর্বশেষ উইন্ডোজ প্রোগ্রামটি হল উইন্ডোজ ১০।
কয়েকটি বহুল ব্যবহৃত মাইক্রোসফট উইন্ডোজ
উইন্ডোজ ১০-এর কথা প্রথম আভাস দেয়া হয় সফটওয়্যার ও ওয়েব ডেভেলপারদের জন্য ২০১৪ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত মাইক্রোসফটের বার্ষিক বিল্ড সম্মেলনে। উইন্ডোজ ১০ এর লক্ষ্য মূলত ব্যবহারকারীর নিজস্ব পছন্দনীয় শর্টকামিংগুলি সঠিক ব্যবস্থা করা, যা প্রথম উইন্ডোজ ৮-এর মাধ্যমে পরিচয় করানো হয়েছিলো। এটির সাথে অতিরিক্ত মেশিন যোগ করার মাধ্যমে ডেস্কটপ কম্পিউটার ও ল্যাপটপের মত টাচস্ক্রিন নয় এমন ডিভাইসে ব্যাবহারকারী অভিজ্ঞতা উন্নয়ন করা হয়েছে। এতে আরও রয়েছে উইন্ডোজ স্টোরের অ্যাপ রান করার ক্ষমতা।
ডেভেলপারদের জন্য মাইক্রোসফ্ট ভিজুয়াল স্টুডিও এবং মাইক্রোসফ্ট এসকিউএল সার্ভার বেশ জনপ্রিয়। এদের প্রত্যেকটি সফটওয়ারই ডেস্কটপ কম্পিউটার বাজারে প্রায় সর্বব্যাপী বিস্তার লাভ করেছে। এছাড়াও মাইক্রোসফট এমএসএনবিসি কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক, এমএসএন ইন্টারনেট পোর্টাল, মাইক্রোসফট এনকার্টা মালটিমিডিয়া বিশ্বকোষের মালিক। মাইক্রোসফট কম্পিউটার হার্ডওয়ার যেমন মাইক্রোসফট মাউস এবং হোম এন্টারটেইনমেন্ট যেমন এক্সবক্স, এক্সবক্স ৩৬০ এবং মাইক্রোসফট মিডিয়ারুম সেট-টপ বক্স প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান।
মাইক্রোসফট-এর জনপ্রিয় কিছু অ্যাপ্লিকেশন -
বাংলাদেশে কম্পিউটার ব্যবহারের সূচনা হয় ষাটের দশকে এবং নববই-এর দশকে তা ব্যাপকতা লাভ করে। দশকের মধ্যভাগ থেকে এ দেশে তথ্য প্রযুক্তি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করতে শুরু করে। পাকিস্তান পরমাণু শক্তি কমিশনের পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, ঢাকা-তে ১৯৬৪ সালে স্থাপিত হয় বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) প্রথম কম্পিউটার। এটি ছিল আইবিএম (International Business Machines - IBM) কোম্পানির 1620 সিরিজের দ্বিতীয় প্রজন্মের একটি মেইনফ্রেম কম্পিউটার (Mainframe Computer) যার প্রোগ্রামার ছিলেন মুহাম্মদ হানিফ উদ্দিন মিয়া। এই কম্পিউটারের র্যাম ছিল মাত্র ২০ কিলোবাইট । যন্ত্রটির প্রধান ব্যবহার ছিল জটিল গবেষণা কাজে গাণিতিক হিসাব সম্পন্নকরণ।
ষাটের দশকে দেশে ও বিদেশে বৈজ্ঞানিক গবেষণাসহ ব্যাংক-বীমা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে দ্রুত প্রসার ঘটতে শুরু করে; এবং এজন্য রুটিন হিসাবের পরিমাণ যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি প্রয়োজন হয়ে পড়ে হিসাবে দ্রুততা আনয়নের। বড় বড় অনেক প্রতিষ্ঠানে হাতে-কলমে হিসাব পরিচালনা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। এসময় দেশের কয়েকটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ব্যয়বহুল মেইনফ্রেম কম্পিউটার স্থাপন করে। ষাটের দশকের শেষ দিকে তদানীন্তন হাবিব ব্যাংক IBM 1401 কম্পিউটার এবং ইউনাইটেড ব্যাংক IBM 1901 কম্পিউটার স্থাপন করে। প্রধানত ব্যাংকের যাবতীয় হিসাব-নিকাশের জন্য ব্যবহূত এসব কম্পিউটার ছিল তৃতীয় প্রজন্মের মেইনফ্রেম ধরনের।
স্বাধীনতার পূর্বে, ১৯৬৯ সালে পরিসংখ্যান ব্যুরোতে স্থাপিত হয় একটি IBM 360 কম্পিউটার। আদমজী জুট মিলেও এ সময় একটি মেইনফ্রেম কম্পিউটার স্থাপিত হয়েছিল। সীমিত পরিসরে হলেও স্বাধীনতা পূর্বকালে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, ফলিত পদার্থবিজ্ঞান, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক্স কৌশল প্রভৃতি বিষয়ের পাঠ্যক্রমে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার-এর অন্তর্ভুক্তি শুরু হয়। ১৯৭২-এর পর থেকে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো নামক প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত হয় IBM 370, IBM 9100 এবং IBM 4341 প্রভৃতি বৃহৎ কম্পিউটার। বাংলাদেশের সুপার কম্পিউটারটি হলো- IBM-RS/6000।
বাংলাদেশে প্রথম ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ চালু হয় । প্রথম ইন্টারনেট চালু হয় ১৯৯৬ সালে এবংবাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল কম্পিউটার পত্রিকাটি হল কম্পিউটার জগত ।বাংলাদেশের প্রথম ইন্টারনেট ভিত্তিক নিউজ এজেন্সি হল BD News ।২০১০ সালের দিকে বাংলাদেশের টেশিস কম্পানি প্রথম বাংলাদেশে প্রস্তুত দোয়েল ল্যাপটপ বাজারে আনে ।
অনেক প্রাচীন সভ্যতা অ্যাবাকাস ব্যবহার করত। রোমানদের অ্যাবাকাস ছিল ব্রোঞ্জ নির্মিত লিপিফলক। লিপিফলকটি খাঁজকাটা ছিল। গোলাকৃতির গুটি গুলি গড়িয়ে যেতে পারত যাকে বলা হত ক্যালকুলি । রোমান ভাষায় ক্যালকুলি (Calculi)-এর বাংলা অর্থ হল- নুড়ি। রোমানদের অ্যাবাকাস পরবর্তীকালে মধ্যপ্রাচ্যে এবং দূরপ্রাচ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। মধ্যযুগীয় ইংল্যান্ডে অ্যাবাকাসের একটি সরলীকৃত রূপ ব্যবহার করা হত। দ্বিতীয় শতকে চীনদেশের সাহিত্যে অ্যাবাকাস ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায়। কিন্তু ত্রয়োদশ শতাব্দীর আগে চীনদেশে অ্যাবাকাস তেমন ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়নি। রোমান অ্যাবাকাস এবং চৈনিক এবাকাসের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য ছিল। চৈনিক অ্যাবাকাসে প্রতিটি পর্যায়ে একটি করে গুটি বেশি থাকত এবং গুটিগুলি তারের উপর লাগানো থাকত। পঞ্চদশ শতাব্দীতে জাপানে অ্যাবাকাসের ব্যবহার শুরু হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে এর একটি উন্নত সংস্করণ প্রচলন হয়। চীন ও জাপানের কিছু কিছু অঞ্চলে এখনও অ্যাবাকাসের প্রচলন আছে। চীনে অ্যাবাকাসকে বলে সুয়ান পান (Suan-pan)। জাপানে বলা হয় সরোবান ( Soroban)।রাশিয়ায় অ্যাবাকাসকে বলা হয় স্কোসিয়া ।
গণকযন্ত্র বা কম্পিউটার হল এমন একটি যন্ত্র যা সুনির্দিষ্ট নির্দেশ অনুসরণ করে গাণিতিক গণনা সংক্রান্ত কাজ খুব দ্রুত করতে পারে।কিন্তু একটি কম্পিউটার এর কোন বিচার-বিশ্লেষণ ক্ষমতা থাকে না । তাই কম্পিউটারের কোন সিদ্ধান্তে পৌছাতে মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন হয় ।
কম্পিউটার (computer) শব্দটি গ্রিক কম্পিউট (compute)শব্দ থেকে এসেছে। compute শব্দের অর্থ হিসাব বা গণনা করা। আর কম্পিউটার (computer) শব্দের অর্থ গণনাকারী যন্ত্র। কিন্তু এখন আর কম্পিউটারকে শুধু গণনাকারী যন্ত্র বলা যায় না। কম্পিউটার এমন এক যন্ত্র যা তথ্য গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন করে। সভ্যতার বিকাশ এবং বর্তমানে তার দ্রুত অগ্রগতির মূলে রয়েছে গণিত ও কম্পিউটারের প্রবল প্রভাব।
এপ্লিকেশন সফটওয়্যার তৈরী করা হয় ব্যবহারকরীর চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কাজ করার জন্য। এপ্লিকেশন সফটওয়্যার অপারেটিং সিস্টেম, ইউটিলিটি সফটওয়্যার, এবং একটি প্রোগ্রামিং ভাষা সফটওয়্যার থেকে ভিন্ন। এটি যে কাজের জন্য তৈরী করা হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে এটা লেখা, সংখ্যা, ছবি অথবা এই সবগুলোর সমন্বয়ে হতে পারে। কিছু কিছু এপ্লিকেশন প্যাকেজ কম্পিউটারের একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য হতে পারে যা সবাই ব্যবহার করে একই উদ্দেশ্য এবং এটি শুধু একটি সুবিধা বা উদ্দেশ্যের উপর জোর দেয় যেমন ওয়ার্ড প্রসেসিং| অন্যগুলোকে ডাকা হয় ইন্টিগ্রেটেড সফটওয়্যার যেগুলো একই সঙ্গে একাধিক সুবিধার উপর জোর দেয়। ব্যবহারকারী দ্বারা তৈরী বা লিখিত সফটওয়্যার সিস্টেমে ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর কাঙ্খিত কাজ করা যায় এগুলো হল স্প্রেডশিট টেমপ্লেট, ওয়ার্ড প্রসেসরের ম্যাক্রো, গ্রাফিক্স অথবা এনিমেশনের স্ক্রিপ্ট ইত্যাদি। এমনকি ইমেইলের ফিল্টারও একধরনের ব্যবহারকারী লিখিত সফটওয়্যার (User-written software)| ব্যবহারকারীরা এটা তৈরী করে এবং বারবার দেখে এটা গুরুত্বপূর্ন কিনা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের জন্য।
বহুল ব্যবহৃত বিভিন্ন এপ্লিকেশন সফটওয়্যার
এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্লানিং
একাউন্টিং সফটওয়্যার
টাস্ক এবং সিডিউলিং
ফিল্ড সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট
ডেটা ম্যানেজমেন্ট
কন্টাক্ট ম্যানেজমেন্ট
স্প্রেডশিট
পারসোনাল ডেটাবেজ
ডকুমেন্ট সম্পর্কিত
ডকুমেন্ট আসেম্বলি
ওয়ার্ড প্রসেসিং
ডেস্কটপ পাবলিশিং সফটওয়্যার
ডাইয়াগ্রাম সফটওয়্যার
প্রেসেনটেশন সফটওয়্যার
এনালিটিক্যাল সফটওয়্যার
কম্পিউটার এলজেবরা সিস্টেম
নিউমেরিক্যাল সফটওয়্যার
নিউমেরিক্যাল সফটওয়্যারের তালিকা
ফিজিক্স সফটওয়্যার
বিজ্ঞান সফটওয়্যার
পরিসংখ্যানের সফটওয়্যারের তালিকা
নিউরাল নেটওয়ার্ক সফটওয়্যার
সহযোগী সফটওয়্যার
ইমেইল
ব্লগ
রিসার্ভেশন সিস্টেম
আর্থিক সফটওয়্যার
বানিজ্যিক সফটওয়্যার
ব্যাংক সফটওয়্যার
ক্লিয়ারিং সফটওয়্যার
এরিথমেটিক সফটওয়্যার
স্প্রেডশিটের আভিধানিক অর্থ হলো ছড়ানো বড় মাপের কাগজ। ব্যাবসায় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক হিসাব সংরক্ষণের জন্য এ ধরনের কাগজ ব্যাবহার করা হয়।এ কাগজে ছক করে(সারি ও কলাম) একটা ব্যাবসায় প্রতিষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গ আর্থিক চিত্র তুলে ধরা যায়। বর্তমানে কাগজের স্প্রেডশিটের স্থান দখল করেছে সফটওয়্যার নির্ভর স্প্রেডশিট প্রোগ্রাম। এর ফলে নানা কাজে স্পেডশিটের ব্যাবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
সত্তর দশকের শেষের দিকে Apple Company সর্বপ্রথম Visicale স্প্রেডশিট সফটওয়্যার এর উদ্ভাবন করে।পরবর্তীকালে Microsoft Excel, Open office cale, Kspread নামের স্প্রেডশিট সফটওয়্যার উদ্ভাবিত হয়। বর্তমানে বহুল ব্যাবহুত ও প্রচলিত জনপ্রিয় স্পেডশিট সফটওয়্যার হলো Microsoft Excel.
স্প্রেডশিট হলো এমন একধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম। এটিকে কখনো কখনো Workbook বলা হয়। একটি রেজিস্টার খাতায় যেমন অনেকগুলো পৃষ্ঠা থাকে,তেমনি একটি ওয়ার্কবুকে অনেকগুলো স্প্রেডশিট বলে।একেকটা ওয়ার্কশিটে বহুসংখ্যক সারি(Row) ও কলাম থাকে।
সংখ্যা প্রতীক (numeral) হল কিছু প্রতীক বা প্রতীকের সমষ্টি, অথবা প্রাকৃতিক ভাষার বিভিন্ন শব্দের মত যা সংখ্যা (number) নির্দেশ করে। সংখ্যা এবং সংখ্যা প্রতীকের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। প্রাকৃতিক ভাষায় শব্দ যেমন এখানে সংখ্য প্রতীক তেমনি একটি টার্ম; আবার শব্দ যে বিষয়টিকে নির্দেশ করে তা এখানে সংখ্যা হিসেবে হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। অর্থাৎ সংখ্যা প্রতীক সংখ্যাকে নির্দেশ করে। যেমন, "11", "eleven", "XI", "১১", "এগারো"- সংখ্যা প্রতীকগুলো আলাদা হলেও এরা সবাই একটি মাত্র সংখ্যাকে নির্দেশ করে। এই নিবন্ধে বিভিন্ন সংখ্য প্রতীক পদ্ধতি সম্বন্ধে সাধারণ আলোচনা করা হয়েছে।
সংখ্যা পদ্ধতিকে সাধারণত ৪ ভাগে ভাগ করা হয়। (১) ডেসিমেল নাম্বার সিস্টেম, (২) বাইনারী নাম্বার সিস্টেম, (৩) অক্টাল নাম্বার সিস্টেম ও (৪) হেক্সা ডেসিমেল নাম্বার সিস্টেম। ডেসিমেল নাম্বার সিস্টেমে অঙ্ক ১০ টি অর্থাৎ এর বেজ ১০ (১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮,৯,০)। অনুরূপভাবে বাইনারী নাম্বার সিস্টেমের বেজ ২ (১,০), অক্টাল নাম্বার সিস্টেমের বেজ ৮ (১,২,৩,৪,৫,৬,৭,০), হেক্সা ডেসিমেল নাম্বার সিস্টেমের বেজ ১৬(১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮,৯,A,B,C,D,E,F, ০ )।
শেয়ারিং -
কোন কম্পিউটারে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একাধিক হোস্ট কম্পিউটারের শেয়ার করা রিসোর্সের যে কোন একটি কম্পিউটার হতে ব্যবহার করা যায়। এর মাধ্যমে কোন একটি কম্পিউটারে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের সাহায্যে অন্য একটি দূরবর্তী কম্পিউটারের রিসোর্স ব্যবহার করা যায়।শেয়ার রিসোর্সের উদাহরণ হল-প্রোগ্রাম শেয়ারিং, ডাটা, স্টোরেজ ডিভাইস, প্রিন্টার , স্ক্যানার ইত্যাদি ।
শেয়ারিং ২ ধরনের হতে পারে-
কোন প্রতিষ্ঠানে শেয়ারিং এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল অর্থ ,সময় ও স্থানের সাশ্রয় । তাই আজকাল বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারে শেয়ারিং দেখা যায় ।
লিনাক্স ও ইউনিক্স
কম্পিউটারের প্রকার
কম্পিউটারের গঠন ও প্রচলন নীতির ভিত্তিতে একে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
আকার, সামর্থ্য, দাম ও ব্যবহারের গুরুত্বের ভিত্তিতে ডিজিটাল কম্পিউটারকে আবার চার ভাগে ভাগ করা যায়।
মাইক্রোকম্পিউটার বা পার্সোনাল কম্পিউটারকে তিনটি শ্রেনীতে ভাগ করা হয়। যথাঃ-
নিচে কম্পিউটারের পূর্ণাঙ্গ শ্রেণীবিভাগ দেখানো হলো :
এনালগ কম্পিউটার
যে কম্পিউটার একটি রাশিকে অপর একটি রাশির সাপেক্ষে পরিমাপ করতে পারে,তাই এনালগ কম্পিউটার। এটি উষ্ণতা বা অন্যান্য পরিমাপ যা নিয়মিত পরিবর্তিত হয় তা রেকর্ড করতে পারে।মোটর গাড়ির বেগ নির্ণায়ক যন্ত্র এনালগ কম্পিউটারের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
ডিজিটাল কম্পিউটার
ডিজিটাল কম্পিউটার দুই ধরনের বৈদ্যুতিক ভোল্টেজ দ্বারা সকল কিছু প্রকাশ করা হয়। ভোল্টেজের উপস্থিতিকে ১ এবং অনুপস্থিতিকে ০ দ্বারা প্রকাশ করা হয় এটি যে কোন গণিতের যোগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে এবং বিয়োগ,গুণ ও ভাগের মতো অন্যান্য অপারেশন সম্পাদন করে। আধুনিক সকল কম্পিউটার ডিজিটাল কম্পিউটার।
হাইব্রিড কম্পিউটার
হাইব্রিড কম্পিউটার হলো এমন একটি কম্পিউটার যা এনালগ ও ডিজিটাল কম্পিউটারের সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যগুলোর সমন্বয়ে গঠিত। এটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহার করা হয়। সুতরাং বলা যায়, প্রযুক্তি ও ভিত্তিগত দিক থেকে এনালগ ও ডিজিটাল কম্পিউটারের আংশিক সমন্বয়ই হচ্ছে হাইব্রিড কম্পিউটার। সাধারণত হাইব্রিড কম্পিউটারে তথ্য সংগ্রহ করা হয় অ্যানালগ পদ্ধতিতে এবং গণনা করা হয় ডিজিটাল পদ্ধতিতে। যেমন আবহাওয়া দপ্তরে ব্যবহৃত হাইব্রিড কম্পিউটার অ্যানালগ পদ্ধতিতে বায়ুচাপ,তাপ ইত্যাদি পরিমাপ করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে গণনা করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া,ক্ষেপ্নাস্ত্র নিক্ষেপ ও চিকিৎসাক্ষেত্রে নির্ভুল রোগনির্ণয় ইত্যাদি কাজে এর প্রচুর ব্যবহার রয়েছে।
মেইনফ্রেম কম্পিউটার
সুপার কম্পিউটারের চেয়ে ছোট কিন্তু অন্যান্য কম্পিউটারের চেয়ে বড় এ ধরনের কম্পিউটার একই সঙ্গে অনেকগুলি গ্রহণ মুখ/ নির্গমন মুখ এবং অনেক রকম সহায়ক স্মৃতির সাথে সংযোগ রক্ষা করে কাজ করতে পারে। বড় বড় প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের কম্পিউটারের ব্যবহার দেখা যায়। উদাহরণ- UNIVAC 1100/01, IBM6120, IBM4341, NCR N8370, DATA GENERAL CS30 ইত্যাদি।
মিনি কম্পিউটার
মিনি বা মিনিফ্রেম কম্পিউটারকে বলা হয় মধ্যম সারির কম্পিউটার। মাঝারি ধরনের এ শ্রেণীর কম্পিউটারকে একটি সাধারণ টেবিলে বাসানো সম্ভব। এ শ্রেণীর কম্পিউটারের টার্মিনালের মাধ্যমে অনেক ব্যবহারকারী কাজ করতে পারে। এ ধরনের কম্পিউটারের কেন্দ্রিয় প্রক্রিয়াকরণ অংশের জন্য সাধারণত একক বোর্ড বিশিষ্ট বর্তনী ব্যবহৃত হয়।
কেনেথ ওলসেন প্রথম মিনি কম্পিউটার- PDP-1 তৈরি করতে সমর্থ হন ।তাই তাকে মিনি কম্পিউটারের জনক বলা হয়।
উদাহরণ - PDP11,NOVA3,IBM S/34,IBM S/36 pdp-11, ibms/36, ncrs/9290, IBM 9375.ইত্যাদি।
মাইক্রো কম্পিউটার
মাইক্রো কম্পিউটারকে পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসি(Personal computer or PC) বলেও অভিহিত করা হয়। ইন্টারফেস চিপ (Mother Board) , একটি মাইক্রোপ্রসেসর, সিপিইউ, র্যাম, রম, হার্ডডিস্ক ইত্যাদি সহযোগে মাইক্রো কম্পিউটার গঠিত হয়। দৈনন্দিন জীবনের সর্বক্ষেত্রে এ কম্পিউটারের ব্যবহার দেখা যায়। ম্যকিনটোস আইবিএম পিসি এ ধরনের কম্পিউটার।
মাইক্রো কম্পিউটার (Micro Computer) বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় এ ধরনের কম্পিউটারগুলো আকৃতিগত দিক হতে ছোট এবং দামেও খুব সস্তা। কেন্দীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশের জন্য সাধারণত একক বোর্ড বিশিষ্ট বর্তনী ব্যবহৃত হয়। সাধারণত ব্যাংকের হিসাব সংক্রান্ত কাজে এ শ্রেণীর কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ - IBM PC, APPLE iMac ইত্যাদি। মাইক্রোকম্পিউটার বা পার্সোনাল কম্পিউটারকে তিনটি শ্রেনীতে ভাগ করা হয়। যথাঃ-
(১) সুপার মাইক্রো (Super Micro)
(২) ডেস্কটপ (Desk Top)
(৩) ল্যাপটপ (Lap Top)
পিডিএ (PDA=Personal Digital Assistsnce) সাব-নোট বুক । ইহাকে পামটপ বা পকেট পিসি ও বলা হয়।
সুপার কম্পিউটার
অত্যন্ত শক্তিশালী ও দ্রুতগতিসম্পন্ন কম্পিউটারকে সুপার কম্পিউটার বলে। এ কম্পিউটারের গতি প্রায় প্রতি সেকেন্ডে ১ বিলিয়ন ক্যারেক্টর। কোনো দেশের আদমশুমারির মতো বিশাল তথ্য ব্যবস্থাপনা করার মতো স্মৃতিভাণ্ডার বিশিষ্ট কম্পিউটার হচ্ছে সুপার কম্পিউটার। CRAY 1, supers xll,Titan(যুক্তরাষ্ট্র),Tianhe 2(চীন) এ ধরনের কম্পিউটার।
*বাণিজ্যিকভাবে সফল প্রথম সুপার কম্পিউটার- CDC-6600 ।২০১২ সালের শেষের দিকে টাইটান পৃথিবীর দ্রুততম সুপার কম্পিউটারের খেতাব পায়।সম্প্রতি বিশ্বের দ্রুতগতির সুপার কম্পিউটার তালিকার শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছে চীনের তিহানহে-২ ।
ট্যাবলেট কম্পিউটার
ট্যাবলেট কম্পিউটার এক ধরণের মাইক্রো কম্পিউটার। যা পাম টপ কম্পিউটার নামে পরিচিত। এটি স্পর্শপর্দা সম্বলিত প্রযুক্তি। এটি এনড্রয়েড এবং উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে চলে।
কম্পিউটারের প্রজন্মকে পাঁচ(৫) ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
(১) প্রথম প্রজন্ম
(২) দ্বিতীয় প্রজন্ম
(৩) তৃতীয় প্রজন্ম
(৪) চতুর্থ প্রজন্ম
(৫) পঞ্চম প্রজন্ম
প্রথম প্রজন্ম (১৯৫১-১৯৫৯)
* আকারে বড় বিধায় প্রচুর তাপ উৎপাদনকারী;
* মেমরি অত্যন্ত অল্প;
* ভ্যাকুয়াম টিউব দিয়ে তৈরি ভাল্ব;
* মেমরি চৌম্বকীয় ড্রামের;
* কোড ব্যবহার করে প্রোগ্রাম চালানোর ব্যবস্থা;
* এই কম্পিউটারের যান্ত্রিক গোলযোগ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পাওয়ার খরচ বেশি এবং
* এই প্রজন্মের কম্পিউটারে যান্ত্রিক ভাষায় প্রোগ্রাম লিখা হত।
*প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারে ইনপুট আউটপুট ডিভাইস হিসেবে ব্যবহার করা হতো পাঞ্চকার্ড
প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ENIAC,EDSAC,BINAC,MARK-1/2/3,IBM-650 প্রভৃতি।
দ্বিতীয় প্রজন্ম (১৯৫৯-১৯৬৫)
* এটিতে মডিউল ডিজাইন ব্যবহার করে সার্কিটের প্রধান প্রধান অংশগুলো আলাদা বোর্ডে তৈরি করা যেত;
* অধিক নির্ভরশীল, অধিক ধারণক্ষমতা এবং তথ্য স্থানান্তরের সুবিধা;
* সাইজে ছোট, গতি বেশি এবং বিদ্যুৎ ও তাপ উৎপাদন কম;
* ট্রানজিস্টর দ্বারা তৈরি ও মেমরি চুম্বক কোরের এবং
* অ্যাসেম্বলি ভাষায় প্রোগ্রাম লিখা হত।
দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল -IBM -1620,IBM-1400 , IBM 1600
তৃতীয় প্রজন্ম (১৯৬৫-১৯৭১)
* বিভিন্ন প্রকার উন্নত মেমরি ব্যবস্থার উদ্ভাবন;
* ব্যাপক একীভূত বর্তনীর বা IC এর ব্যবহার;
* সাইজ ছোট বলে বিদ্যুৎ খরচ কম এবং
* উচ্চতর ভাষা দিয়ে প্রোগ্রাম লিখা তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার থেকে শুরু হয়।
*তৃতীয় প্রজন্ম থেকে কম্পিউটারের সঙ্গে টেলিভিশনের পর্দার মতো মনিটরের প্রচলন শুরু হয়
তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-BM 370, PDP-8 ইত্যাদি
চতুর্থ প্রজন্ম (১৯৭১- বর্তমান)
* উন্নত চিপ এর ব্যবহার ও ক্ষুদ্রাকৃতির কম্পিউটার;
* বিশাল পরিমাণ মেমরি ও অত্যন্ত গতি এবং
* টেলিযোগাযোগ লাইন ব্যবহার করে ডাটা আদান-প্রদান।
*www,HTML,DVD,ipod,2G(2nd Generation) internet,3G(3rd Generation)internet,wifi প্রভৃতি চতুর্থ কম্পিউটার জেনারেশনের অন্যতম আবিষ্কার ।
বর্তমান প্রজন্মের কম্পিউটার গুলো চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার ।চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-IBM 3033, IBM 4341 ইত্যাদি
পঞ্চম প্রজন্ম (ভবিষ্যৎ প্রজন্ম)
* এই ধরণের কম্পিউটার প্রতি সেকেন্ডে ১০-১৫ কোটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
* শব্দের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যাবে। ফলে এই প্রজন্মের কম্পিউটার শুনতে পারবে এবং কথা বলতে পারবে।
* অন্যান্য প্রজন্মের কম্পিউটারের সাথে এই প্রজন্মের প্রধান পার্থক্য এই প্রজন্মের কম্পিউটারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থাকবে। ফলে কম্পিউটার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে তা সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যবহার করতে পারবে।
* ভিজুয়্যাল ইনপুট বা ছবি থেকে ডাটা গ্রহণ করতে পারবে।
*এ প্রজন্মের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল VLSI(Very Large System Integration) এর ব্যবহার
কম্পিউটার যন্ত্রের জন্মলগ্ন থেকে এই সময়কাল পর্যন্ত সময়কে মোটামুটি তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।যেমনঃ(১) প্রাচীন যুগ, (২) মধ্য যুগ এবং (৩) বর্তমান বা আধুনিক যুগ।
কম্পিউটার এর উদ্ভব হয়ে ছিল গানিতিক হিসাব নিকাশ সম্পাদনের জন্য। বর্তমানকালে বিভিন্ন কাজে এর ব্যবহার দেখা গেলেও মূল উদ্দেশ্য একই রয়ে গেছে এবং এ কাজের জন্যই কম্পিউটার বেশি ব্যবহৃত হয়। মূলত কম্পিউটারের জন্ম আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে। খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় তিন হাজার বছর আগে গণনা কাজের জন্য এক ধরণের যন্ত্র ব্যবহার করা হতো। যার নাম ছিল এ্যাবাকাস(Abacus)। এই এ্যাবাকাস নামের যন্ত্রের সাহায্যে প্রাচীন যুগে বিভিন্ন গণনার কাজ করা হতো। আবার এই এ্যাবাকাস থেকেই আধুনিক ক্যালকুলেটর তৈরীর ধারণা এসেছে এটা অনস্বীকার্য।এই যন্ত্রে গণনার কাজের জন্য ব্যবহার করা হতো কতকগুলো গোল চাকতি। এই চাকতি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গণনার কাজ সম্পন্ন করা হতো।কম্পিউটারকে যদি বড় আকারের গণনা যন্ত্র হিসেবে ধরা হয় তাহলে এই এ্যাবাকাস-ই কম্পিউটারের প্রথম চিন্তার সূত্রপাত।
Abacus আবিষ্কারের পর পার হয়ে যায় কয়েক হাজার বছর। সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষের চিন্তা চেতনা, জ্ঞান ও জানার ক্ষেত্রও হয়ে উঠে বড়ো ও উন্নত। Abacus তৈরী হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় তিন হাজার বছর আগে চীন দেশে। আর প্রথম যান্ত্রিক গণনা যন্ত্র তৈরি হয় ১৬৪৫ খ্রিষ্টাব্দে। স্যার ব্লায়াস প্যাসকেল নামের একজন ফরাসি বিজ্ঞানী এটা তৈরি করেন।বিজ্ঞানীর নাসানুসারে এই যন্ত্রের নাম দেওয়া হয়েছিল প্যাসকেলাইন। এটার কার্যপ্রণালী কিন্তু ছিল Abacus এর মতই।তবে এতে চাকতির পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছিল দাঁতযুক্ত চাকা বা গিয়ার। মানুষ প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে ব্যবহার করলো এই যন্ত্র।
১৬৯৪ সালের দিকে প্যাসকেলাইন যন্ত্রের কিছুটা উন্নত সংষ্করণ তৈরি করলেন গটফ্রেড উইলহেম ভন লেইবনিজ।এই যন্ত্রে নাম দিলেন তিনি স্টেপড রেকোনার। পেরিয়ে গেল প্রায় আরও সোয়া এক’শ বছর। ১৮২০ সালের মাঝামাঝি স্টেপড রেকোনার যন্ত্রকে আরও একটু উন্নত করলেন টমাস দ্যা কোমার। ততদিনে মানুষও বেশ আধুনিক হয়েছে।নতুন নতুন প্রযুক্তির দিকে তাদের অনুসন্ধান অব্যহত রয়েছে। আর এরই ফলশ্রুতিতে ১৮২১ সালে ঘটে গেল এক বিপ্লব।
চার্লস ব্যাবেজ নামের একজন ইংরেজ গণিতবিদ অংকের বিভিন্ন তথ্যের সহজ সমাধানের জন্য তৈরি করে ফেললেন একটি যন্ত্র। যার নাম দেওয়া হলো ডিফারেন্স ইঞ্জিন।অনতিকাল পরে এই যন্ত্রটিকে আরও আধুনিক করা হলো, নাম দেওয়া হলো এনালাইটিক্যাল ইঞ্জিন। ১৮২১ সালের পূর্বে যেসব যন্ত্র তৈরি হয়েছিল সেগুলো শুধু অংক আর সংখ্যা নিয়ে কাজ করা হতো কিন্তু চার্লস ব্যাবেজের উদ্ভাবিত এই যন্ত্রে অংকের পাশাপাশি তথ্য নিয়েও কাজ করা যেত। তবে এই যন্ত্রের কিছু বাধ্যবাধকতাও ছিল।যন্ত্রটি চালাতে হতো একধরণের ছিদ্রযুক্ত পাঞ্চকার্ড দিয়ে এবং এই পাঞ্চকার্ডটি একবারই মাত্র ব্যবহার করা যেত। দ্বিতীয়বার ব্যবহার করতে হলে আবার নতুন কার্ড প্রয়োজন হতো। ব্যাভেজের যন্ত্রে ছিল তিনটি অংশ। সেগুলো হলো-
(ক)তথ্য বা নির্দেশ প্রদাণের অংশ- এই অংশে থাকবে যন্ত্রটি চালানোর সমস্ত তথ্য বা নির্দেশ এবং বিভিন্ন পর্যায়ের ফলাফল।
(খ)ফলাফল প্রদানের অংশ- এই অংশে গণনার উপযুক্ত ফলাফল প্রদান করবে।
(গ)তথ্য সংরক্ষণ-এই অংশে তথ্যগুলো সংরক্ষণ করা যাবে।
বর্তমানের আধুনিক একটি কম্পিউটারে যেসব অংশ দেখা যায় বা বিদ্যমান রয়েছে চার্লস ব্যাবেজের এনালাইটিক্যাল ইঞ্জিনে তার সবগুলোই বিদ্যমান ছিল। তাছাড়া এই প্রথম কোন যন্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে গণনা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ করতে পারতো। সুতরাং এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, চার্লস ব্যাবেজই হচ্ছেন কম্পিউটারের আদি পিতা।
১৮৯০সাল। ডঃ হারম্যান হলোরিথ নামের একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারী বিভাগে কাজ করতেন।সেই সময় লোক গণনার কাজ হাতে নেন আমেরিকান সেনসাস ব্যুরো নামের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান।তারা নিশ্চিত জানতো এই গণনার কাজে লোকবল লাগবে প্রচুর, তেমনি সময়ও লাগবে অনেক। মোটামুটি দশ বছরের আগে গণনার কাজ শেষ করা যাবে না, এমই ধারণা ছিল তাদের।
ডঃ হারম্যান তাদের এই ধারণা ভেঙ্গে দিলেন। তিনি চার্লস ব্যাবেজের যন্ত্রের সাথে টেবুলেটর নামের একটি যন্ত্র জুড়ে দিলেন। আর এই যন্ত্রের বৈশিষ্ট্য হলো এতে কাগজের তৈরী পাঞ্চকার্ড ব্যবহার করা যাবে, আর এই পাঞ্চকার্ডে ছিদ্রও করতে পারবে তার এই নতুন যন্ত্র টেবুলেটর।এসময় যন্ত্রটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।
এই যন্ত্রের অবিষ্কারের সাথে সাথে পুরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাড়া পড়ে গেল। অবিশ্বাস্যভাবে ডঃ হারম্যান এই যন্ত্রের সাহায্যে আদমশুমারীর দশ বছরের কাজ শেষ করে ফেললেন মাত্র তিন বছরে।এই অভূতপূর্ব সাফল্য ডঃ হারম্যানকে উদ্বুদ্ধ করে তুললো।তিনি নিজেই প্রতিষ্ঠা করলেন একটি কোম্পানী। নাম দিলেন টেবুলেটিং মেশিন কোম্পানী। এই কোম্পানীই পরবর্তীতে আইবিএম নামে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ কম্পিউটার কোম্পানী হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
ডঃ হারম্যানের আবিষ্কারের পর কেটে গেল প্রায় পঞ্চাশ বছর। এই দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারে ছোটখাটো পরিবর্তন ছাড়া আর তেমন উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না।তাছাড়া প্রথম দিকের সমস্ত কম্পিউটারই ছিল এনালগ কম্পিউটার । ১৯৪৬ সালে প্রথম সংরক্ষিত প্রোগ্রাম (Stored Program) -এর ধারণা উদ্ভাবন করেন জন ভন নিউম্যান। তাই তাকে আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলা হয় । তাঁর এই ধারনার উপর ভিত্তি করে প্রথম স্বয়ংক্রিয় ডিজিটাল কম্পিউটার তৈরি করা হয়।তার এ তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে কনরাড যুসে ১৯৪১ সালে তৈরি করেন সম্পূর্ণ প্রোগ্রাম নিয়ন্ত্রিত প্রথম ইলেকট্রোমেকানিক্যাল কম্পিউটার Z3 ।১৯৪৩ সালে জন ভিসেন্ট অ্যাটানসফ ও ক্লিফোড বেরি তৈরি করেন বাইনারি গণিত ভিত্তিক প্রথম কম্পিউটার Atanasoff Berry computer (ABC) ।ইউনিভার্সিটির জন মশলি ও প্রেসপার একার্ট নামের দুই প্রতিভাবান ইঞ্জিনিয়ার প্রথম প্রজন্মের ডিজিটাল কম্পিউটার তৈরিতে হাত দিলেন। অক্লান্ত পরিশ্রম করে ১৯৫১ সালে তারা তৈরি করে ফেললেন পৃথিবীর প্রথম ইলেক্ট্রনিকস ডিজিটাল কম্পিউটার। তার নাম দেওয়া হলো এনিয়াক।
কম্পিউটারের ইতিহাসে এলো এক নতুন অধ্যায়।আমরা এখন যেসব কম্পিউটার দেখতে পাই এনিয়াক তার চাইতে অত্যন্ত কম ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও আকারে ছিল প্রকান্ড।এখন একটা কম্পিউটার রাখার জন্য একটি ছোট্ট টেবিল যথেষ্ট। কিন্তু তখন এনিয়াক কম্পিউটারকে রাখার জন্য দরকার পড়তো ৯মিটার প্রস্থ ও ১৫মিটার দৈঘ্যের একটি ঘর। আর এর ওজন ছিল প্রায় ১৫ টন। এটা চালানোর জন্য লাগতো ১৫০ কলোওয়াট বিদ্যুৎ। মজার ব্যাপার হলো কাজ করতে করতে এটা অসম্ভব রকমের গরম হয়ে উঠতো তখন এটাকে মাঝে মাঝে ঠান্ডা পানি ঢেলে শীতল করার প্রয়োজন পড়তো।এনিয়াক ছিল বাল্ব নির্ভর কম্পিউটার আর এতে ১৮০০০ বাল্ব লাগানো ছিল।তবে আগেকার কম্পিউটারের তুলনায় এটা ছিল দ্রুত গতিসম্পন্ন। প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৫০০০ গণনার কাজ করতে পারতো।
পৃথিবীর সভ্যতায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগার সাথে সাথে এনিয়াকের বাধ্যবাধকতা কাটিয়ে ওঠার জন্য মানুষ নিরলস গবেষনা চালিয়ে যেতে লাগলো।অবশেষে ১৯৪৬ সালের শেষ দিকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার হাওয়ার্ড এইকিন নামের একজন প্রতিভাবান বিজ্ঞানী তৈরী করে ফেললেন এনিয়াকের চেয়ে কিছুটা ছোট এবং অরেকটু ক্ষমতাসম্পন্ন ইলেক্ট্রনিকস কম্পিউটার। যার নাম দেওয়া হলো মার্কওয়ান। তবে ছোট হলেও এই কম্পিউটারটি ছিল ১৫মিটার দৈঘ্য ও ৬মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট। এর উচ্চতা ছিল ২.৪মিটার।এতে ব্যবহৃত বিদ্যুতের তারের দৈর্ঘ্য ছিল ৮০০ কিলোমিটার। আর এটা তৈরি করতে যে খরচ পড়তো সেই খরচ দিয়ে বর্তমান সময়ের পুরো একটা কম্পিউটার কোম্পানী বানিয়ে ফেলা যাবে।
১৯৪৮ সালের শেষদিকে বারডিন, ব্রাটান এবং শকলি নামের তিন প্রতিভাবান আমেরিকান বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করলেন ট্রানজিষ্টার। ফলে কম্পিউটার দিগন্তে সূচিত হলো এক নতুন বিপ্লবের।বাল্ব নির্ভর এনিয়াক এবং মার্কওয়ান কম্পিউটারের জায়গা জুড়ে নিল এই ট্রানজিষ্টার লাগানো কম্পিউটার।এতকরে কম্পিউটারের আকারেও বেশ পরিবর্তন এলো, ছোট হয়ে গেল বিশাল আকারের কম্পিউটার। তার উপর তথ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং ফলাফল প্রদাণের সময়সীমা একেবারে কমে গেল। আবার তৈরী খরচও অনেক কমে গেল।ট্রানজিস্টর ভিত্তিক প্রথম কম্পিউটারটি ছিল — TX-O ।এরপ্এর বাজারে আসে ট্রানজিস্টর ভিত্তিক প্রথম মিনি কম্পিউটার- PDP-8।এই সময়কার কম্পিউটারের মধ্যে ১৯৪৯ সালের তৈরি এডস্যাকের নাম উল্লেখযোগ্য।এই কম্পিউটারের মূল নির্মাতা হলেন হাঙ্গেরিয় গণিতবিদ জন ভন নিউম্যান। এর পরপরই ১৯৫১ সালে আমেরিকার রেমিংটন র্যান্ড নামের এক কোম্পানী সর্বপ্রথম বান্যিজিক ভিত্তিতে তৈরি করে ইউনিভ্যাক ওয়ান নামের একটি কম্পিউটার। বাণিজ্যিক ডাটা প্রসেসিং কাজের উপযোগি এই কম্পিউটারটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। তবে উচ্চমাত্রায় বিদ্যুৎপ্রবাহ সরবরাহ করার সময় যন্ত্রটি বেশ গরম হয়ে উঠতো।
১৯৫৮সালের মাঝামাঝি সারা পৃথিবী চমকে উঠলো জ্যাক কেলবি নামের একজন প্রতিভাবান মার্কিন বৈজ্ঞানিকের কল্যাণে।জ্যাক কেলবি ও তার সতীর্থ রর্বাট নয়েস আবিষ্কার করে ফেললেন সিলিকন চিপ। এই সিলিকন চিপের ছোট্ট এক টুকরোর উপর স্থাপন করা হলো অনেকগুলো ট্রানজিষ্টর। এদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করার জন্য তৈরি করা হলো সুক্ষ্ম পথ, যাকে বলা হয় সার্কিট।এই সার্কিটের মধ্যদিয়ে উচ্চমাত্রার বিদ্যুৎপ্রবাহ প্রবাহিত করা সম্ভব হয়ে উঠলো। এই সার্কিট সংযোজনের নাম দেওয়া হলো আইসি বা ইনটিগ্রেটর সার্কিট। এই ইনটিগ্রেটর সার্কিট দিয়ে কম্পিউটার তৈরি করতে উৎসাহী হলেন প্রস্তুতকারকরা। কারণ এতেকরে কম্পিউটার আকারে অনেক ছোট হবে। আর সেইসাথে খরচও কমে আসবে অনেক। আবার কম্পিউটারেরও ব্যাপক প্রসার ঘটবে।পরবর্তীতে এই ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের ব্যপক উন্নতি সাধিত হয়।১৯৬০ এর শেষদিকে কেনেথ এইচ ওলসেন একটি উন্নত ডায়োড ট্রান্সফরমার গেট সার্কিট আবিস্কার করেন যা মিনি কম্পিউটার তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। একারনে তাকে মিনি কম্পিউটারের জনক বলা হয়ে থাকে।১৯৬৮ সালে বারোস কোম্পানি ইন্ট্রিগ্রেটেড সার্কিট ভিত্তিক প্রথম কম্পিউটার B2500 এবং B3500 তৈরি করে । এসময় IC চিপ দিয়ে তৈরি হয় প্রথম ডিজিটাল কম্পিউটার- IBM System 360 ।১৯৭৪ সালের হেনরি এডওয়ার্ড রবাটর্স এর ডিজাইনকৃত Altair-880 কে প্রথম মাইক্রোপ্রসেসরভিত্তিক কম্পিউটার বা মাইক্রোকম্পিউটার হিসেবে গন্য করা হয়।প্রথম তৈরী পারসোনাল কম্পিউটার- Altair-8800 ও ছিল তার ই অবদান ।তাই মাইক্রো কম্পিউটারের জনক হিসাবে এইচ এডওয়ার্ড রবাটর্স চিরস্মরণীয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তাক্লারা উপত্যকায় চলতে থাকে গবেষণার পর গবেষণা।একসময় এই জায়গাটার নামই হয়ে যায় সিলিকন ভ্যালি।১৯৭১সালে ছোট্ট একটুকরো সিলিকন চিপের উপর অনেকগুলো ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট বসানো সম্ভব হয়ে ওঠে। এই সন্নিবেশিত চিপের নাম দেওয়া হয় মাইক্রোপ্রসেসর। বর্তমানে আধুনিক কম্পিউটার এই মাইক্রোপসেসরের উপর নির্ভরশীল।
এম্বেডেড কম্পিউটার হলো একটি বিশেষায়িত কম্পিউটার সিস্টেম - যা একটি বৃহৎ সিস্টেম বা মেশিনের অংশবিশেষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি কোন প্রচলিত কম্পিউটার নয়। এম্বেডেড সিস্টেমে সাধারণত একটি মাইক্রোপ্রসেসর বোর্ড এবং সুনির্দিষ্ট কাজের জন্য প্রোগ্রামিং সম্বলত একটি রম থাকে। আধুনিক এম্বেডেড কম্পিউটার সিস্টেমে মাইক্রোকন্ট্রোলার এর ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। এম্বেডেড কম্পিউটার এর উৎপাদন খরচ অনেক কম এবং এটি আকারে মাইক্রোকম্পিউটারের চেয়ে ছোট। এটি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয়। যেমন; একটি এয়ার কন্ডিশনারে ঘরের একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা নির্দেশ করে কমান্ড দেয়া হল। ঘরের তাপমাত্রা ঐ নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পৌছানো মাত্রই স্বয়ংক্রিয়ভাবে এয়ার কন্ডিশনার বন্ধ হয়ে যাবে। আর এই কাজটি করবে এয়ার কন্ডিশনারে থাকে এম্বেডেড কম্পিউটার। এছাড়াও এই কম্পিউটার প্রিন্টার, থার্মোস্ট্যাট, ভিডিও গেম, ব্যাংকিং কার্যক্রমে ব্যবহৃত এটিএম প্রভৃতিতে এম্বেডেড কম্পিউটার সিস্টেমের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।
Automated Teller Machine (ATM) বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ব্যাংকিং সিস্টেম যা পরিচালিত হয় এম্বেডেড কম্পিউটার এর সাহায্যে। এর মাধ্যমে দিনের যেকোন সময় অর্থ জমা, উত্তলোন ও স্থানান্তর করা যায়। ব্যাংক তার গ্রাহককে একটি প্লাস্টিক কার্ড সরবরাহ করে। কার্ডের মাধ্যমে টাকা জমা, উত্তলোন বা জমা করা হয়। এগুলোকে ATM কার্ড বলা হয়। বাংলাদেশে প্রচলিত ATM কার্ডগুলো মূলত ডেবিট কার্ড।
এছাড়াও রয়েছে ক্রেডিট কার্ড ও রেডিক্যাশ কার্ড। ক্রেডিট কার্ড দ্বারা ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পণ্য কেনাবেচা থেকে শুরু করে যেকোন লেনদেন করা যায়। এই কার্ডের গ্রাহককে একটি বাৎসরিক চার্জ প্রদান করতে হয়। বর্তমান বিশ্বে VISA, MASTER CARD, AMERICAN EXPRESS ইত্যাদি ক্রেডিট কার্ড প্রচলিত আছে।
রেডিক্যাশ কার্ড নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করা হয়। এতে গ্রাহকের নাম, সাক্ষর ও ছবি থাকে। এসব ধরনের কার্ডের পিছনে ম্যাগনেটিক স্ট্রাইপ দেয়া থাকে, একে প্লাস্টিক মানি বলে।
কম্পিউটার প্রোগ্রামিং (ইংরেজি: Computer programming) হলো কিছু লিখিত নির্দেশ যা অনুযায়ী একটি কম্পিউটার কাজ করে। প্রোগ্রামের লিখিত রূপটিকে সোর্স কোড বলা হয়। যিনি সোর্স কোড লিখেন তাকে প্রোগ্রামার, কোডার বা ডেভেলপার বলা হয়। যেকোন বই যেমন একটি ভাষাতে যেমন ইংরেজি, রুশ, জাপানি, বাংলা, ইত্যাদিতে লেখা হয়, তেমনি প্রতিটি প্রোগ্রাম কোন একটি নির্দিষ্ট প্রোগ্রামিং ভাষাতে লেখা হয়,যেমন সি++,জাভা ইত্যাদি। প্রোগ্রাম রচনা করার সময় প্রোগ্রামারকে ঐ নির্দিষ্ট প্রোগ্রামিং ভাষার সিনট্যাক্স বা ব্যাকরণ মেনে চলতে হয়।
প্রোগ্রামিং এর ধাপগুলো যেকোন সমস্যা সমাধানের ধাপগুলোর মতোই। প্রধান ধাপগুলো হলোঃ
প্রোগ্রামিং ভাষা (ইংরেজি ভাষায়: programming language) হচ্ছে এক ধরনের কৃত্রিম ভাষা (artificial language) যা কোন যন্ত্রের, বিশেষ করে কম্পিউটারের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। মানুষের মুখের স্বাভাবিক ভাষাগুলোর মত প্রোগ্রামিং ভাষাগুলোও বাক্যতাত্ত্বিক (syntactic বা বাক্যস্থিত বিভিন্ন পদের মধ্যে সম্পর্ক কী হবে সে-সংক্রান্ত) ও আর্থ (semantic বা শব্দের অর্থসংক্রান্ত) নিয়ম মেনে চলে।
তথ্য সুবিন্যস্তকরণ ও প্রক্রিয়াকরণে এবং অ্যালগোরিদমসমূহ নির্ভুলভাবে প্রকাশ করতে প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করা হয়। কিছু কিছু লেখক প্রোগ্রামিং ভাষা বলতে কেবল সেই সব ভাষাকে বোঝান যেগুলো সম্ভাব্য সমস্ত অ্যালগোরিদম প্রকাশে সক্ষম;[কখনো কখনো সরল ধরনের কৃত্রিম ভাষাগুলোকে প্রোগ্রামিং ভাষা না বলে 'কম্পিউটার ভাষা (computer language) বলা হয়।
এ পর্যন্ত বহু হাজার প্রোগ্রামিং ভাষা সৃষ্টি করা হয়েছে, এবং প্রতি বছরই নতুন নতুন প্রোগ্রামিং ভাষা উদ্ভাবন করা হচ্ছে। যেমন,
১) ১ম প্রজন্মের ভাষা (১৯৪৫) ঃ যান্ত্রিক ভাষা (নিম্নস্তরের ভাষা)
২) ২য় প্রজন্মের ভাষা (১৯৫০) ঃ এসেম্বলি ভাষা (নিম্নস্তরের ভাষা)
৩) ৩য় প্রজন্মের ভাষা (১৯৬০) ঃ উচ্চতর ভাষা
৪) ৪র্থ প্রজন্মের ভাষা (১৯৭০) ঃ অতি উচ্চতর ভাষা
৫) ৫ম প্রজন্মের ভাষা (১৯৮০) ঃ স্বাভাবিক ভাষা
প্রোগ্রামিং ভাষার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে এর সংজ্ঞা দেয়া যায়:
কোন প্রোগ্রামিং ভাষার বাইরের রূপকে তার সিনট্যাক্স বলা হয়। বেশির ভাগ প্রোগ্রামিং ভাষাই সম্পূর্ণ টেক্সট-ভিত্তিক। এগুলি শব্দ, সংখ্যা ও বিরামচিহ্নবিশিষ্ট টেক্সট ব্যবহার করে, অনেকটা স্বাভাবিক ভাষাগুলির মতই। তবে কিছু কিছু প্রোগ্রামিং ভাষা আছে যেগুলি চিত্রভিত্তিক। এগুলি বিভিন্ন প্রতীকের মধ্যকার অবস্থানগত সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে প্রোগ্রাম লিখতে সহায়তা করে।
কোন প্রোগ্রামিং ভাষার প্রতীকগুলি কী কী উপায়ে একত্রিত হয়ে সিনট্যাক্সগতভাবে সঠিক প্রোগ্রাম তৈরি করতে পারে, ভাষাটির সিনট্যাক্সে তার বিবরণ থাকে। আর কোন প্রতীকসমষ্টির অর্থ কী হবে, তা নির্ধারণ করে ভাষাটির সেমান্টিক্স।
প্রোগ্রামিং ভাষার সিনট্যাক্স সাধারণত নিয়মিত এক্সপ্রেশন (regular expression) ([[আভিধানিক বিশ্লেষণ|আভিধানিক গঠনের জন্য) এবং বাকাস-নাউর রূপ (Backus-Naur Form) (ব্যাকরণিক গঠনের জন্য) এই দুইয়ের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়।
নীচে লিস্পের ওপর ভিত্তি করে লেখা একটি সরল ব্যাকরণ দেয়া হল:
expression ::= atom | list
atom ::= number | symbol
number ::= [+-]?['0'-'9']+
symbol ::= ['A'-'Z''a'-'z'].*
list ::= '(' expression* ')'
উপরের ব্যাকরণটি নীচের জিনিসগুলিকে সংজ্ঞায়িত করেছে:
এই ব্যাকরণ সঠিকভাবে অনুসরণকারী কিছু টোকেনের উদাহরণ: '12345
', '()
', '(a b c232 (1))
'
সিনট্যাক্সগতভাবে সঠিক প্রোগ্রাম মাত্রেই সেমান্টিক্স বা অর্থগতভাবে সঠিক হবে, তা নয়। অনেক সিনট্যাক্সগতভাবে সঠিক প্রোগ্রাম তাই অনুবাদ বা নির্বাহ করার সময় ত্রুটির সৃষ্টি করতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে এরকম প্রোগ্রাম অসংজ্ঞায়ির আচরণ (undefined behavior) প্রদর্শন করতে পারে। আবার কোন প্রোগ্রাম প্রোগ্রামিং ভাষার সমস্ত নিয়মকানুন মেনে চললেও এটি প্রোগ্রামার যা করতে চেয়েছিলেন সেই অর্থে না-ও বাস্তবায়িত হতে পারে।
মানুষের মুখের স্বাভাবিক ভাষাতেও এর উদাহরণ মেলে। কোন ব্যাকরণগতভাবে শুদ্ধ বাক্য অর্থহীন হতে পারে, যেমন:
নীচের সি প্রোগ্রামিং ভাষায় লেখা কোডটি সিনট্যাক্সগতভাবে শুদ্ধ, কিন্তু এটি এমন একটি অপারেশন সম্পাদন করে যা সেমান্টিক্সগতভাবে বা অর্থগতভাবে সংজ্ঞায়িত নয়। (যেহেতু p একটি নাল পয়েন্টার, p->real এবং p->im অপারেশনগুলি অর্থহীন):
complex *p = NULL; complex abs_p = sqrt (p->real * p->real + p->im * p->im);
যেকোন প্রোগ্রামিং ভাষা মান (values) ও এক্সপ্রেশনগুলিকে বিভিন্ন “টাইপে” শ্রেণিকরণ করে। এই শ্রেণিকরণ, কীভাবে টাইপগুলি ব্যবহার করা যাবে এবং টাইপগুলির একে অপরের সাথে সম্পর্ক কী, তা সংজ্ঞায়িত থাকে প্রোগ্রামিং ভাষাটির টাইপ ব্যবস্থায়। ভাষাটিতে কী ধরনের উপাত্ত কাঠামো ব্যবহার করা যাবে, টাইপ ব্যবস্থায় মূলত তারই বিবরণ থাকে। বিধিগত গণিত ব্যবহার করে টাইপ ব্যবস্থাগুলি ডিজাইন ও গবেষণা “টাইপ তত্ত্বের” আলোচ্য।
আধুনিক ডিজিটাল কম্পিউটারের ভেতরে সমস্ত উপাত্তই শূন্য বা এক আকারে রক্ষিত থাকে (দ্বিমিক সংখ্যা ব্যবস্থা দেখুন)। এই উপাত্ততে বাস্তব বিশ্বের নানা তথ্য যেমন নাম, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, পরিমাপ, ইত্যাদি প্রকাশ পেতে পারে। প্রোগ্রামিং ভাষা নিম্নস্তরের দ্বিমিক উপাত্তকে এই উচ্চ-স্তরের তথ্যের ধারণায় বাস্তবায়ন করে উপাত্ত টাইপের সাহায্য নিয়ে। এছাড়া আরও কিছু বিমূর্ত টাইপ আছে যেগুলি প্রোগ্রামের নিরাপত্তার সুবিধার্থে কিংবা প্রোগ্রামারকে অর্থহীন বিবৃতির ব্যাপারে সাবধান করে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়।
প্রোগ্রামিং ভাষাগুলিকে তাদের টাইপ ব্যবস্থাগুলির ওপর ভিত্তি করে শ্রেণীবিভাগ করা যায়।
টাইপকৃত বনাম অ-টাইপকৃত ভাষাঃ
কোন প্রোগ্রামিং ভাষার একটি উপাত্ত টাইপের জন্য সংজ্ঞায়িত অপারেশনগুলি যখন অন্য একটি উপাত্ত টাইপের ওপর প্রয়োগ করা যায় না, তখন সেই ভাষাটিকে “টাইপকৃত ভাষা” বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, "this text between the quotes
" একটি স্ট্রিং। বেশির ভাগ প্রোগ্রামিং ভাষায় স্ট্রিং-কে কোন সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা অর্থহীন। তাই বেশির ভাগ ভাষাতে কোন প্রোগ্রামকে এই ধরনের অপারেশন সম্পাদন করতে বাধা দেয়া হয়। কিছু কিছু ভাষায় এই অর্থহীন অপারেশনটি প্রোগ্রামটি কম্পাইল করার সময় ধরা হয়; একে বলা হয় “স্থির টাইপ পরীক্ষা” (static type checking), এবং কম্পাইলার অপারেশনটি প্রত্যাখ্যান করে। আবার অন্য কিছু ভাষায় এই শরনের অপারেশন যখন প্রোগ্রামটি চালানো হয় বা “রান” করা হয়, তখন ধরা হয়; একে বলা হয় “চলমান টাইপ পরীক্ষা” (dynamic type checking), এবং এতে “রান-টাইম” এক্সেপশন সৃষ্টি হয়।
নিম্নস্তরের ভাষাঃ
নিম্নস্তরের ভাষা(low level language) সরাসরি কম্পিউটারের প্রধান মেমোরির উপর কাজ করতে পারে। অ্যাসেম্বলি ভাষা একটি নিম্নস্তরের ভাষা,এ ভাষায় সরাসরি কম্পিউটারের রেজিস্টারকে নিয়ন্ত্রণ করে কাজ করতে হয়। এ ভাষাগুলো হার্ডওয়্যারের উপর নির্ভরশীল,তাই এক কম্পিউটারে অ্যাসেম্বলি ভাষায় লেখা প্রোগ্রাম অন্য কম্পিউটারে কাজ নাও করতে পারে।
FIREWALL বাইরের আক্রমণ থেকে এক বা একাধিক কম্পিউটার কে রক্ষা করার জন্য হার্ডওয়্যার আর সফটওয়্যার এর মিলিত প্রয়াস। ফায়ারওয়াল এর সবচেয়ে বহুল ব্যবহার লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক এর ক্ষেত্রে। তথ্য নিরাপত্তা রক্ষাও এর কাজের অংশ। ফায়ার ওয়াল হল এক বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা যাতে এক নেটওয়ার্ক থেকে আরেক নেটওয়ার্কে ডাটা প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। দুই নেটওয়ার্কের মাঝে এই ফায়ারওয়াল থাকে। যাতে এক নেটওয়ার্ক থেকে আরেক নেটওয়ার্কে কোন ডাটা পরিবাহিত হলে সেটিকে অবশ্যই ফায়ারওয়াল অতিক্রম করতে হয়। ফায়ারওয়াল তার নিয়ম অনুসারে সেই ডাটা নিরীক্ষা করে দেখে এবং যদি দেখে যে সে ডাটা ওই গন্তব্যে যাওয়ার অনুমতি আছে তাহলে সেটিকে যেতে দেয়। আর তা না হলে সেটিকে ওখানেই আটকে রাখে বা পরিত্যাগ করে। vccvসিস্কো রাউটারেই এখন বিল্ট -ইন সিস্কো ios ফায়ারওয়াল পাওয়া যায়।
ইন্টারনেট ব্যাংকিংঃ
ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে সাধারণ ব্যাংকিং কার্যক্রম তাকেই ইন্টারনেট ব্যাংকিং বা অনলাইন ব্যাংকিং বলে। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট-এ যুক্ত হয়ে ব্যাংকের নির্দিষ্ট সুরক্ষিত ওয়েবসাইট-এর মাধ্যমে একজন গ্রাহক তার ব্যাংক একাউন্টে প্রবেশ করে। একাউন্টে প্রবেশের জন্য ব্যাংক গ্রাহককে প্রয়োজনীয় তথ্য (সাধারণত: একটি আইডি ও পাসওয়ার্ড) সরবরাহ করে। তবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল ব্যাংকি কার্যক্রম করা যায় না। কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে যা দিন দিন কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহারের ফলে একজন গ্রাহক নিম্মোক্ত সুবিধাগুলো পেতে পারেন:
(বাংলাদেশে এখনও অন্য ব্যাংকের হিসাবে অর্থ স্থানান্তরের সুবিধা নেই। অথ্যাৎ এটি শুধু একই ব্যাংকের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে, ভারতে এই সুযোগ সুবিধা NEFT এবং RTGS-এর মাধ্যমে পাওয়া যায়।)
বি:দ্র: ব্যাংক ভেদে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধার কিছুটা তারতম্য হতে পারে।
বাংলাদেশে যে সমস্ত ব্যাংক ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা দেয় এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
কম্পিউটার ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ব্যবহার :
আজকের কম্পিউটার একটি আধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্র। কম্পিউটার Computer শব্দটি ইংরেজিCompute শব্দ থেকে এসেছে। Compute শব্দের অর্থ গণনা করা আর Computer শব্দের অর্থগণনাকারী যন্ত্র। পূর্বে কম্পিউটার দিয়ে শুধু হিসাব-নিকাশের কাজ করা হতো। কিন্তু বর্তমানেআধুনিক কম্পিউটার দিয়ে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে জটিল হিসাব-নিকাশের কাজ নির্ভুলভাবে করাছাড়াও বহু রকমের কাজ করা যায়। কম্পিউটার দিয়ে সারা জীবনের হিসাব কয়েক মিনিটে করাসম্ভব। এটি অনেকগুলো নির্দেশ নির্ভুলভাবে ও তড়িৎ গতিতে নির্বাহ করতে পারে।
কম্পিউটারের নিজের কোন কাজ করার ক্ষমতা নেই। কম্পিউটার আবিষ্কারকগণ এবংব্যবহারকারীগণই বলে দিচ্ছে তাকে কী করতে হবে এবং কেমন করে করতে হবে। মূলত উপযুক্তনির্দেশের প্রভাবে কম্পিউটার জড় পদার্থ হতে গাণিতিক শক্তিসম্পন্ন এক বুদ্ধিমান যন্ত্রে পরিণতহয়েছে।.... বিস্তারিত..........
একটু জটিল হলো তবে সাধারণ কথা হলো- কম্পিউটার কিছু ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রাংশের সমষ্টি যা বিদ্যুৎপ্রবাহের মাধ্যমে ও সফটওয়্যার এর সহায়তা নিয়ে সচল করা হয় এবং চাহিদা অনুসারে ব্যবহারকরা হয়।
কম্পিউটার বর্তমান অবস্থায় একবারে আসেনি। এটি বিভিন্ন ধাপ বা পর্যায়ে অতিক্রম করে এসেছে। এই এক একটি ধাপ বা পর্যায়কে এক একটি প্রজন্ম বা জেনারেশন বলে। প্রতিটি প্রজন্মপরিবর্তনের সময় কিছু নতুন বৈশিষ্ট সংযোজিত হয় এবং পুরনো বৈশিষ্ট্যগুলোর বিলুপ্তি ঘটে।কম্পিউটারকে প্রজন্ম হিসেবে ভাগ করার প্রথা চালু হয় IBM কোম্পানির একটি বিজ্ঞাপন থেকে।এ প্রজন্ম বিন্যাস নিয়ে মতান্তর আছে। তবে ভালব, আসি-সি, ট্রানজিস্টর, মাইক্রোপ্রসেসরইত্যাদি এক একটি প্রজন্ম নির্দেশ করে।
আধুনিক কম্পিউটারের ধারণা উপস্থাপন করেন কেমব্রিজ বিশ্বদ্যালয়েয়র স্নাতক এবং পরবর্তীতেগণিতের লুকাসিয়ান অধ্যাপক স্যার র্চালস ব্যাবেজ ১৮৩৮ সালে। এজন্য তাকে কম্পিউটারেরজনক বলা হয়। কিন্তু তার সময়ে উপযুক্ত অন্যান প্রযুক্তি না থাকায় তিনি তার প্রস্তাবিত গণনাযন্ত্রপরিপূর্ণভাবে প্রদর্শন করতে পারেনি।
র্চালস ব্যাবেজের ধারণার প্রতিফলন ঘটিয়ে ১৯৪৪ সালে হাওয়ার্ড একিনের নেতৃত্বে মার্ক-১Mark-1 নামের ইলেক্ট্রনিক কম্পিউটার আবিষ্কার হয়। এই কম্পিউটারটি তৈরিতে কাজ করেছিলেনহার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও বিখ্যাত আইবিএম কোম্পনির একদল বিজ্ঞানী।
কম্পিউটারের যে ভাবে কাজ করে থাকে-
সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্য ব্যবহারকারী কর্তৃক তৈরি প্রোগ্রাম (Programs) কম্পিউটার গ্রহণকরে মেমোরিতে সংরক্ষণ করে এবং ব্যবহারকারীর নির্দেশে কম্পিউটার প্রোগ্রাম নির্বাহ(Execute) করে।
কী-বোর্ড, মাউস, জয়স্টিক, ডিস্ক ইত্যাদির মাধ্যমে কম্পিউটার ডেটা (Data) গ্রহণ করে।
ডেটা প্রসেস (Processor) করে
মনিটর, প্রিন্টার, ডিস্ক ইত্যাদির মাধ্যমে কম্পিউটার ফলাফল প্রকাশ করে ।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার-
১. ওয়ার্ড প্রসেসিং বা লেখা-লেখির কাজে(আমাদের দেশেই মুলত) টাইপ রাইটারের বিকল্প হিসেবেঅফিস আদালতে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।
২. অফিসের যাবতীয় ব্যবস্থাপনার কাজে আজকাল কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে
৩. বিভিন্ন ধরনের গবেষণামূলক কাজে।
৪. চিকিৎসা ও শিক্ষাক্ষেত্রে।
৫. একস্থান থেকে অন্যস্থানে সংবাদ প্রেরণের ক্ষেত্রে।
৬. বিনোদনের ক্ষেত্রে যেমন টিভি দেখা, ভিডিও দেখা ও গান বাজানো, উপস্থাপনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে।
৭. যোগাযোগ ব্যবস্থার টিকিট বিক্রি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ট্রন্সপোর্টের ডিরেকশন ওগতি নির্ণয়ের কাজে।
৮. শিল্পক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি পরিচালনা বা নিয়ন্ত্রণের কাজেও কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে।
৯. মুদ্রণশিল্পে প্রকাশনামূলক যে কোন কাজে।
১০. আধুনিক সামরিক বাহিনীতে নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে ইত্যাদি
মূল কথা হলো আমাদের জীবনের প্রতিক্ষেত্রে আমরা এই প্রযুক্তির সাথে জড়িয়ে পড়েছি।
বর্তমান যুগ কম্পিউটাররের যুগ। আধুনিক সভ্যতায় কম্পিউটারের ব্যবহার দিন দিন বেড়েইচলেছে। বর্তমানে কম্পিউটার দিয়ে চিত্ত বিনোদন হতে মহাকাশযান নিয়ন্ত্রন পর্যন্ত সব কিছু করাহচ্ছে। নিম্নে কম্পিউটারের কিছু ব্যবহার উল্লেখ করা হলোঃ
১. অফিসের কাজ : অফিসের যাবতীয় কাজ দ্রুত ও নির্ভূলভাবে কম্পিউটার দ্বারা করা যায়।অফিসের কাজ বন্টন, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, চিঠিপত্র লেখা, রেকর্ড সংরক্ষণ, ফাইল রক্ষণাবেক্ষণ,দৈনিক আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ ইত্যাদি কাজ কম্পিউটার দ্বারা করা যায়।
২. ব্যাংকিংয়ের কাজে : আধুনিক উন্নত বিশ্বে প্রতিটি ব্যাংক কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, চেকেরহিসাব , ক্রেডিট ও ডেবিটের হিসাব কম্পিউটার দ্বারা করা হচ্ছে। এতে গ্রাহকদের চেক জমাদিয়ে অপেক্ষায় থাকার বিরক্তি দূর হচ্ছে। ব্যাংকে কম্পিউটার ব্যবহরের ফলে একদিকে যেমনগ্রাহকগণ দ্রুত সেবা পাচ্ছেন তেমনি ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কাজের চাপ থেকেমুক্তি পাচ্ছে। বর্তমানে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রতিটি ব্যাংকের হিসাব কেন্দ্রীয়ব্যাংকে দ্রুত জানানো সম্ভব হচ্ছে।
৩. ব্যবসায়-বাণিজ্যের কাজে : ফান্ড ট্রান্সফার, ব্যালেন্স সীট, হিসাবরক্ষণ, পে-রোল, আয়-ব্যয়হিসাব, ইত্যাদি কম্পিউটার দ্বারা দ্রুত সম্ভব।
৪. কল-কারখানার কাজে : কল-কারখানার যাবতীয় কাঁচামাল আমদানির হিসাব, রপ্তানি দ্রব্যেরহিসাব, কর্মকর্তা ও শ্রমিক সংখ্যার হিসাব, শ্রমিক কর্মচারীদের মাসিক বেতনের হিসাব,বার্ষিক রিপোর্ট তৈরি ও বার্ষিক বাজেট তৈরি প্রভৃতি কাজ কম্পিউটার দ্বারা করা যায়।
৫. প্রকাশনার কাজে : কম্পিউটার দিয়ে দ্রুত গ্রফিক্স ডিজাইন, মুদ্রণ, গবেষণা রিপোর্ট, বই,চিঠিপত্র ইত্যাদি প্রকাশিত হচ্ছে। যখন কম্পিউটারের ব্যবহার ছিল না, তখন বই প্রকাশ করাছিল কঠিন, এতে প্রচুর সময় ও অর্থ ব্যয় হতো।
৬. সংবাদপত্র : কম্পিউটারের মাধ্যমে খুব দ্রুত সংবাদপত্র প্রকাশের বিভিন্ন কাজ করা যায়।কম্পিউটার নেটওয়ার্ক-এর মাধ্যমে একটি দেশের প্রতিটি শহর থেকে একই সময় সংবাদপত্রবের করা হচ্ছে। এ ছাড়াও ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোন গ্রাহক সংবাদপত্রকম্পিউটারের পর্দায় পড়ে নিচ্ছে অথবা প্রিন্টারের মাধ্যমে প্রিন্ট করে নিচ্ছে।
৭. টেলি কমিউনিকেশনের কাজে : টেলিফোন এবং কম্পিউটারের মধ্যে সংযোগ করে অতি দ্রুতসংবাদ পৃথিবীর একস্থান হতে অন্যস্থানে পাঠানো যাচ্ছে।
৮. চিকিৎসাবিজ্ঞানে : প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা, দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা, ক্যান্সার রোগ নির্ণয়, টিউমারেরগঠন ইত্যাদি কাজে কম্পিউটার দ্রুত ফলাফল দিচ্ছে। বিভিন্ন রোগের ঔষধ নির্ধারণ এবংঔষধের মান নিয়ন্ত্রন কম্পিউটার দিয়ে করা হচ্ছে।
৯. মহাকাশ গবেষণার কাজে : মহাকাশযানের সূক্ষ্ম হিসাব নিকাশ, ডিজাইন, এবং পরিচালনারকাজে কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও দূর আকাশে নভোচারীর গতিপথনির্দেশে সহায়তা করে কম্পিউটার।
১০. প্রতিরক্ষার কাজে : বোমারু বিমান বা যুদ্ধ জাহাজ নিয়ন্ত্রণ, মিসাইল ও ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণইত্যাদি কাজে কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে।
১১. বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ : বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের বিমান যোগাযোগ কম্পিউটার ছাড়া অচল।অনলাইনে সিট রিজার্ভেশন, বিমানের চলাচলের রুট নির্ধারণসহ বিভিন্ন কাজে কম্পিউটারব্যবহার করা হচ্ছে।
১২. শিক্ষার কাজে : শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের বেতনের হিসাব নিকাশ, দ্রুত পরীক্ষারফলাফল প্রকাশ, প্রতি বর্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যার হিসাব ইত্যাদি কম্পিউটার দ্বারা করাসম্ভব। এছাড়া বছর অনুযায়ী পাশ ও ফেল করা ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা কম্পিউটার দ্বারা করাযায়।
১৩. বিনোদনের কাজে : কম্পিউটারে গেম খেলা, গান শোনা, ছবি দেখা ইত্যাদি বিভিন্ন বিনোদনেরজন্য কম্পিউটার ব্যবহার করা হচ্ছে। টিভি কার্ড লাগিয়ে কম্পিউটারকে টিভি হিসাবেও ব্যবহারকরা হচ্ছে।
১৪. আবহাওয়ার কাজে : কম্পিউটারের মাধ্যমে আবহাওয়ার বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করেপূর্বাভাস দেওয়া যায়, যার দ্বারা আমরা কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে পারে।